
ছবি: প্রতীকী
কোলেস্টেরল শব্দটা শুনলেই অনেকের মনে ভয় জাগে। কারণ, উচ্চ কোলেস্টেরল অনেক সময় নীরব ঘাতকের মতো কাজ করে—এবং হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। রক্তে যখন অতিরিক্ত পরিমাণে একধরনের মোমজাতীয় চর্বি জমে, তখনই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। শরীরের কোষ গঠনে ও হরমোন উৎপাদনে কোলেস্টেরল দরকার হলেও, অতিরিক্ত ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল (LDL) ধমনিতে প্ল্যাক তৈরি করে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে। একে অবহেলা করলে তা হৃদরোগে রূপ নিতে পারে।
তবে সুখবর হলো—খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন এনে প্রাকৃতিকভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। জীবনযাপনের অন্যান্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের সঙ্গে মিলিয়ে যদি সঠিক খাবারগুলো খাওয়া যায়, তবে কোলেস্টেরল অনেকটাই কমানো সম্ভব। নিচে এমন পাঁচটি খাদ্যের কথা জানানো হলো, যা নিয়মিত খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা প্রাকৃতিকভাবেই কমতে পারে।
১. ওটমিল (Oatmeal)
পুরো শস্যজাতীয় খাবার কোলেস্টেরল কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর। তার মধ্যে ওটমিল হলো অন্যতম শ্রেষ্ঠ। এতে রয়েছে বিটা-গ্লুকান নামে এক ধরনের দ্রবণীয় আঁশ, যা অন্ত্রে থাকা কোলেস্টেরলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শরীরে এর শোষণ কমিয়ে দেয়। ফলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। স্টিল-কাট বা রোল্ড ওটস দিনে একবাটি খাওয়া যেতে পারে, তার সঙ্গে টকদই, ফল বা বাদাম মিশিয়ে নিলে তা আরও পুষ্টিকর হয়।
২. অ্যাভোকাডো
চমকে যাওয়ার মতো শোনালেও, চর্বিযুক্ত এই ফলটি শরীরের জন্য খুব উপকারী। অ্যাভোকাডোতে থাকা একমাত্রিক অসম্পৃক্ত চর্বি (monounsaturated fat) LDL কমিয়ে HDL বা ‘ভালো কোলেস্টেরল’ বাড়াতে সাহায্য করে। ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় একটি অ্যাভোকাডো রাখলে ওজনাধিক্যসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। অ্যাভোকাডোতে আঁশ ও উদ্ভিজ্জ স্টেরলও থাকে, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি হোল-গ্রেইন টোস্টের উপর ছড়িয়ে খাওয়া বা সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
৩. বেগুন
অনেকের পছন্দ না হলেও, বেগুন কোলেস্টেরল কমাতে দারুণ সহায়ক। এতে ক্যালোরি খুব কম, কিন্তু দ্রবণীয় আঁশ অনেক বেশি। বিশেষ করে বেগুনের বেগুনি রঙের খোসায় থাকা ‘নাসুনিন’ নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালীকে সুরক্ষা দেয় এবং কোলেস্টেরলের বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, বেগুন খেলে এলডিএল কমে যায়। এটি ভাজি করে, রান্না করে বা সিদ্ধ করে ভর্তা বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
৪. গাজর
মিষ্টি স্বাদের এই সবজিটি শুধু চোখ নয়, হার্টের জন্যও উপকারী। গাজরে থাকে পেকটিন নামের দ্রবণীয় আঁশ, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া গাজরের বিটা-ক্যারোটিন অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে হার্টকে সুরক্ষা দেয়। দৈনন্দিন হালকা স্ন্যাকস হিসেবে কাঁচা গাজরও খেতে পারেন—যা মজাদার এবং স্বাস্থ্যকর দুই-ই।
৫. বাদাম (Almonds)
হাতে কাজ করতে করতে একটু বাদাম চিবোতে কার না ভালো লাগে? এই অভ্যাস শুধু মুখের রুচি নয়, হার্টকেও ভালো রাখে। বাদামে রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি, আঁশ, উদ্ভিজ্জ স্টেরল এবং ভিটামিন ই, যা ধমনীতে প্ল্যাক গঠনের বিরুদ্ধে কাজ করে। ২০২৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৪৫টি বাদাম খেলে (প্রায় ২ আউন্স) কার্ডিওমেটাবলিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমে যায়। বাদাম টুকরো করে দই বা সালাদের উপর ছড়িয়ে খেতে পারেন।
এই খাবারগুলো খাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ধূমপান-বিরোধী জীবনধারা অনুসরণ করাও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তের কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো এবং খাদ্যাভ্যাসে নিয়ম আনা হলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব