ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা ভাবেন? নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভুগছেন না তো?

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ২৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৭:২৬, ২৮ জুন ২০২৫

নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা ভাবেন? নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভুগছেন না তো?

ছ‌বি: প্রতীকী

নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার বা এনপিডি একটি জটিল মানসিক সমস্যা, যা একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব এবং তার চারপাশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের ধরনে গভীর প্রভাব ফেলে। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে সবসময় অন্যদের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ মনে করেন। তার মনে হয়, সে অন্য সবার চেয়ে আলাদা, আর তাই সবাইকে তার প্রশংসা করতে হবে, ভালোবাসতে হবে এবং গুরুত্ব দিতে হবে।

এই মানসিক গঠনের ফলে একজন নার্সিসিস্ট মানুষের মধ্যে গভীর আত্মমগ্নতা গড়ে ওঠে। সে নিজেকে এতটাই বড় করে দেখে যে, অন্যদের অনুভূতি বা কষ্ট তার কাছে গুরুত্ব পায় না। সহানুভূতির অভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে তার আচরণে। অন্যের আবেগ বোঝার প্রবণতা তার মধ্যে থাকে না বললেই চলে। তার চাহিদা সবসময় কেন্দ্রে থাকা, প্রশংসা পাওয়া এবং নিজেকে ‘সেরা’ হিসেবে প্রমাণ করা।

এই ধরনের ব্যক্তিরা বাস্তবতা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তারা নিজের কল্পনার জগতে বাস করে, যেখানে তারা নিজেকে অতিমানব বা ব্যতিক্রমী কিছু মনে করে। এই ভাবনা থেকে জন্ম নেয় অহংকার, আত্মপ্রচার এবং আত্মতুষ্টি। এদের আচরণে এক ধরনের দাম্ভিকতা ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখা যায়, যা অনেক সময় বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।

এই সমস্যা ব্যক্তির সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে। তারা অন্যকে তুচ্ছ করে দেখতে পছন্দ করে, সমালোচনা সহ্য করতে পারে না এবং অল্পতেই রেগে যায়। তাদের আচরণে থাকে একটি বড়লোকী ভাব, যেন তারা কাউকে তোয়াক্কা করে না। সম্পর্কের জায়গায় তারা অসাধারণ কিছু আশা করে, কিন্তু নিজেরা কোনো ত্যাগ বা বোঝাপড়ার জায়গায় আসতে চায় না। ফলে সম্পর্কগুলো টিকে থাকে না।

এদের চেহারার অভিব্যক্তি, কথাবার্তা এবং শরীরী ভাষায়ও এক ধরনের আত্মগর্ব ও কর্তৃত্বের ছাপ থাকে। অনেক সময় তারা অন্যকে প্রভাবিত করতে চায়, এমনকি নিজের স্বার্থে মিথ্যা বলতেও দ্বিধা করে না। তারা চায় সমাজে তাদের একটি বড় অবস্থান থাকুক এবং সেই অবস্থান সবাই মেনে নিক। কিন্তু বাস্তবে তারা ভেতরে ভেতরে আত্মতুষ্টিহীনতায় ভোগে এবং প্রায়ই বিষণ্ণ হয়ে পড়ে।

এই ধরনের মানসিক বৈশিষ্ট্যগুলো দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে তা চিকিৎসার আওতায় আনা জরুরি। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার একটি গভীর মানসিক অসঙ্গতি, যার পিছনে থাকতে পারে শৈশবের মানসিক আঘাত, অবহেলা বা অতিরিক্ত প্রশংসার অভ্যাস। সময়মতো চিকিৎসা এবং সঠিক মানসিক সহায়তার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। সচেতনতা ও সহানুভূতির সঙ্গে এই রোগীদের পাশে দাঁড়ানোই হতে পারে পরিবর্তনের প্রথম ধাপ।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/jrxRR4LZeVg?si=cVjtc33jhXBeO3CS

এম.কে.

×