
ছবি: সংগৃহীত।
বিশ্বে পরমাণু অস্ত্র এখনো সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ধ্বংসযজ্ঞের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত। আধিপত্য বিস্তারে পরমাণু শক্তির গুরুত্ব অপরিসীম হলেও মানবজাতির জন্য তা সর্বোচ্চ ঝুঁকির নামও বটে। এ কারণে ইতিহাসে এমন কিছু দেশ আছে যারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি কিংবা অধিকারী হওয়ার পরও তা স্বেচ্ছায় ধ্বংস করেছে বা কর্মসূচি বন্ধ করেছে।
বর্তমানে বিশ্বে ৯টি দেশ পারমাণবিক শক্তিধর হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু এদের বাইরে বেশ কয়েকটি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের পথে গিয়েও তা থেকে সরে এসেছে। এমন অন্তত পাঁচটি দেশ রয়েছে যাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম দক্ষিণ আফ্রিকা।
দক্ষিণ আফ্রিকা: তৈরি করে ধ্বংসকারী একমাত্র দেশ
১৯৮০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকা ছয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করেছিল। কিন্তু ১৯৯০-এর দশকে রাজনৈতিক পরিবর্তন ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তারা সবগুলো অস্ত্র ধ্বংস করে দেয় এবং ১৯৯১ সালে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার নিষেধ চুক্তি (NPT) স্বাক্ষর করে। এটি ইতিহাসে একমাত্র দেশ যারা নিজের তৈরি পারমাণবিক অস্ত্র স্বেচ্ছায় ধ্বংস করেছে।
সোভিয়েত পতনের উত্তরাধিকার: ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাখস্তান
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ইউক্রেনের হাতে চলে আসে প্রায় ১,৯০০টি পারমাণবিক অস্ত্র। কিন্তু ১৯৯৪ সালে তারা ‘বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম’ স্বাক্ষর করে রাশিয়ার কাছে অস্ত্র হস্তান্তর করে এবং এনপিটিতে যোগ দেয়।
একইভাবে বেলারুশ এবং কাজাখস্তানও তাদের মাটিতে অবস্থান করা পারমাণবিক অস্ত্র রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে এবং এনপিটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত হয়।
লিবিয়া: গোপন কর্মসূচি থেকে সরে আসা
১৯৭০-এর দশক থেকে গোপনে পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে আসছিল লিবিয়া। কিন্তু ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক চাপে ও কূটনৈতিক সমঝোতায় গাদ্দাফির সরকার তা বন্ধ করে দেয় এবং পারমাণবিক সরঞ্জাম আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের কাছে হস্তান্তর করে।
এই দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাই একমাত্র দেশ যারা নিজেরাই অস্ত্র তৈরি করে তা ধ্বংস করেছে। অন্যদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙে পড়ার পর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অস্ত্রগুলো পরিত্যাগ করেছে ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাখস্তান। লিবিয়া অস্ত্র তৈরি না করলেও সক্রিয় কর্মসূচি গুটিয়ে নেয়।
মানবজাতির নিরাপত্তা ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা কমানোর ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপগুলো বিশ্ব ইতিহাসে বিরল ও তাৎপর্যপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত।
নুসরাত