
ছবি: সংগৃহীত
“আমি আমার সন্তানদের বলি, খুব বেশি খেলাধুলা কোরো না—না হলে কাপড় বেশি নোংরা হবে, সাবান বেশি লাগবে।” এই কথাগুলো ৪৩ বছর বয়সী সুজানা কাঠুম্বার। সুজানা মালাউইয়ের রাজধানী লিলংউয়েতে একজন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন।
মাসিক আয় মাত্র ৮০,০০০ কাওয়াচা (৪৬ মার্কিন ডলার), অথচ সেই আয়ে তাকে সামলাতে হয় চার সন্তান, স্কুল ফি, খাবার, কাপড়, সাবান—সবকিছু।
সুজানার মতো হাজারো সাধারণ মানুষ এখন মালাউইতে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে দিন পার করছেন। দেশের বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি মে মাসে দাঁড়িয়েছে ২৭.৭%, যা আফ্রিকার অন্যতম উচ্চ হারে গণ্য করা হচ্ছে। অথচ বেতন বাড়ছে না।
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া—এক কেজি চিনি এখন ৪,৫০০ কাওয়াচা (প্রায় ৩ ডলার)। অথচ অনেকের পুরো মাসের আয় শেষ হয়ে যায় সপ্তাহ পেরোতেই।
সুজানা একজন ডিভোর্সি মা। তার প্রাক্তন স্বামী থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা না পেলেও, চার সন্তানের দায়িত্ব পুরোপুরি তার কাঁধে। দুই সন্তান এখনো স্কুলে, বাকি দুজন বেকার।
একবারে স্কুল ফিতে খরচ হয় ৫০,০০০ কাওয়াচা (২৯ ডলার)। এরপর আসে খাতা, খাবার, সাবান—সব মিলিয়ে মাসের শেষে কিছুই জমে না।
তিনি বলেন, “আমি মিথ্যা বলবো যদি বলি মাস শেষে কিছু সঞ্চয় থাকে। একটাকাও থাকে না।”
চআন্তর্জাতিক একাউন্টিং প্রতিষ্ঠান আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং মালাউইকে বিশ্বের হাতে গোনা ‘হাইপারইনফ্লেশন’ আক্রান্ত দেশগুলোর একটি হিসেবে উল্লেখ করেছে।
তাদের মতে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ তিন বছরের সম্মিলিত মুদ্রাস্ফীতির হার ১১৬% ছিল। এমন পরিস্থিতিতে সঞ্চয় দূরের কথা, মানুষ খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, মালাউইয়ের ৭০% মানুষ দৈনিক $২.১৫ ডলারের কম আয়ে দিন কাটান—এটি বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশের চিত্র।
বাজারে ডলারের ঘাটতির কারণে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারছেন না প্রয়োজনীয় পণ্য। ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা (ফরেক্স) পাওয়া যাচ্ছে না, বাধ্য হয়ে অনেকে ব্ল্যাক মার্কেট থেকে $১ ডলারে ৪,০০০–৫,০০০ কাওয়াচা পর্যন্ত দিচ্ছেন, যেখানে সরকারি রেট ১,৭৫০ কাওয়াচা। এই দাম বৃদ্ধির ধাক্কা সরাসরি গিয়ে পড়েছে ভোক্তার ওপর।
লিলংউয়ের চোকা ফ্লি মার্কেটের চেয়ারম্যান স্টিভ ম্যাগোম্বো বলেন, “এই অবস্থায় ব্যবসা করে লাভ তো দুরের কথা, বেঁচেই থাকতে পারছি না।”
২০২৩ সালে আইএমএফের সঙ্গে মালাউই ৪ বছরের $১৭৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি করে, যার $৩৫ মিলিয়ন ইতিমধ্যে ছাড় হয়েছে। তবে এখন এই চুক্তি স্থগিত।
সরকারের দাবি, রিজার্ভ বাড়াতে চাপ দেওয়া হলেও দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী জ্বালানি কেনা ছিল অগ্রাধিকার। অন্যদিকে আইএমএফ বলছে, মালাউই সরকার আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারেনি।
সেপ্টেম্বরে মালাউইতে জাতীয় নির্বাচন। জনসাধারণের দৃষ্টি এখন রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে—তারা কীভাবে এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
সুজানা কাঠুম্বা বলেন, “আমরা সরকারের দিকেই তাকিয়ে থাকি। আশা করি, রাজনীতিবিদরা গরিবদের কথাও ভাববেন।”
মুমু ২