ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

মাইক্রোসফট নির্ভরতা নিয়ে হুঁশিয়ারি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের

প্রকাশিত: ০১:৫৫, ২৮ জুন ২০২৫

মাইক্রোসফট নির্ভরতা নিয়ে হুঁশিয়ারি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের

ছবি: সংগৃহীত।

“মাইক্রোসফট যদি একদিন হঠাৎ আপনাকে বন্ধ করে দেয়?”—এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে একটি ব্লগ পোস্টে বিশ্বজুড়ে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মাইক্রোসফটের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতার ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা জারি করেছেন চেক প্রজাতন্ত্রের গবেষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মিলোস্লাভ হোমার।

“Microsoft Dependency Has Risks” শিরোনামে প্রকাশিত দীর্ঘ বিশ্লেষণধর্মী ব্লগ পোস্টে তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্লাউড পরিষেবা ও সফটওয়্যারের প্রতি অন্ধ নির্ভরতা কমিয়ে ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেছেন।

হোমার মনে করিয়ে দেন, অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে—যেমন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি কারিম খানের মাইক্রোসফট ইমেইল অ্যাকাউন্ট এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়, যা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। যদিও মাইক্রোসফট পরে এ বিষয়ে নিজেদের দায় অস্বীকার করে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, যদি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় আসেন এবং সরকার মাইক্রোসফটকে কিছু নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলকে সেবা না দেওয়ার নির্দেশ দেয়, তাহলে তার প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে।

এই ঝুঁকির আর্থিক মূল্যায়নও করেছেন হোমার। তিনি “Return on Security Investment” মডেল ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করেছেন কত বড় ক্ষতি হতে পারে এই ধরনের নির্ভরতার কারণে। উদাহরণ হিসেবে তিনি ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া CrowdStrike সংক্রান্ত সাইবার বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করেন, যা মাইক্রোসফট নির্ভরতা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তা দেখিয়েছে।

হোমারের ভাষায়, বিশ্বব্যাপী কর্পোরেট মাইক্রোসফট ৩৬৫-এর ব্যবহার বিপুল পরিমাণে। কিন্তু এখনো খুব কম সংখ্যক বিক্রেতাই প্রি-ইনস্টলড লিনাক্স সিস্টেম সরবরাহ করে। মোবাইল বাজারেও অ্যান্ড্রয়েডের বিপুল আধিপত্য রয়েছে, যার প্রত্যেক ব্যবহারকারী কমপক্ষে একটি গুগল অ্যাকাউন্টে বাধ্য হয়ে পড়েন—অর্থাৎ আরেকটি মার্কিন নিয়ন্ত্রিত অবলম্বন।

তিনি বলেন, এই একমুখী প্রযুক্তি জ্ঞান ও পছন্দ প্রতিষ্ঠানগুলিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের অনেকেই প্রযুক্তিগতভাবে অজ্ঞ, আবার যাঁরা প্রযুক্তি বোঝেন বলে বিবেচিত, তাঁরাও কেবল মাইক্রোসফটকেন্দ্রিক ভাবনার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

ব্লগটিতে হোমার একটি প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণারও সমালোচনা করেন—যেখানে অনেকেই মনে করেন, কোনো সফটওয়্যার যদি ফ্রি হয়, তাহলে সেটির কোনো মূল্য নেই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রযুক্তিগত বিকল্প ও স্বাধীনতা ছাড়া ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অসম্ভব।

তিনি বলেন, তথ্য মানে কেবল ডেটা নয়—এর সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা, তুলনা ও বিশ্লেষণও থাকতে হয়। যাঁরা কেবল একটি কোম্পানির পণ্য ও প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে জানেন, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি সীমাবদ্ধ এবং তারা প্রযুক্তিগত বাস্তবতা বুঝতে অক্ষম।

সবশেষে হোমার বলেন, অনেক সিদ্ধান্তই নেওয়া হয় ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে। সঠিক তথ্য ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সেই ভুল ধারণাগুলো ভাঙা সম্ভব। শুধু যুক্তি নয়, সংখ্যার মাধ্যমে দেখাতে হবে—ভুল সিদ্ধান্ত কতটা ঝুঁকি সৃষ্টি করছে এবং তা পরিবর্তন করলে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা সম্ভব।

তিনি বলেন, “কারও ভ্রান্ত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো—তাঁকে সেই ধারণার মূল্য বোঝানো। তবেই হয়তো পরিবর্তন সম্ভব।”

মিরাজ খান

×