
এখানেই আমার প্রচার কার্যক্রম শেষ হয়নি। একবার আমি মানিকগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে যেয়ে সরজমিন সারাদিন ঘুরে ঘুরে সেই সব মহিলাদের সঙ্গে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কথা বলি। যারা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সংসারের আর্থিক অভাব দূর করেছেন। এরা বাড়িতে হাঁস-মুরগি, গাভী পালন করছেন। কেউ বা আবার ছোটখাটো ব্যবসা করছেন। এই প্রতিবেদন বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা কেন্দ্রের গ্রামীণ শ্রোতাদের জন্য জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘আমার দেশ’-এ প্রচারিত হয়। বর্তমানে ‘আমার দেশ’ অনুষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। ওই সময় আমার গ্রামীণ ব্যাংকে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। স্যারের সঙ্গে চিঠিপত্র আদান-প্রদান হতো। একটা চিঠিতে আমি লিখেছিলাম স্যার আপনি ‘নোবেল পুরস্কার’ পাচ্ছেন।
সেন্টার পরিচালনা করেন। দেশ স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের সময় ড. ইউনূস দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। সেই সময় তিনি গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রকল্প চালু করেন। ১৯৭৬ সালে পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পটি চালু করেন। ১৯৮৩ সালে এই প্রকল্পটি ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ হিসেবে রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামে এর কর্মকাণ্ড বিস্তৃত। বাংলাদেশের বাইরেও আমেরিকাসহ গ্রামীণ ব্যাংক পদ্ধতি বিশ্বের ৪০টি দেশে অনুসারী করা হচ্ছে। ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ দেশি ও বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এর মধ্যে সেই সাতজন ব্যক্তির একজন ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার’, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন।
ড. ইউনূসের নিজস্ব দর্শন ও আদর্শ আছে। তিনি মনে করেন, দারিদ্র্য বিমোচনের কর্মসূচি রচনার আগে প্রথমে দারিদ্র্যের বিষয় হবে কতো আন্তরিকভাবে আমরা দারিদ্র্যের অবসান চাই। এ ছাড়া নির্ভেজাল গণতন্ত্র দারিদ্র্য নিরসনের জন্য খুব বেশি প্রয়োজনীয়। অন্যদিকে তিনি মনে করেন গ্রাম ও উপজেলা পর্যায়ে গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার গড়ে তোলা দারিদ্র্য নিরসনের একটা আদর্শিক শর্ত। স্থানীয় সরকার কাঠামো যত নিচের দিকে শক্তিশালী হবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে গরিব মানুষের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা ততই বাড়বে। তিনি গ্রাম সরকার কর্মসূচির প্রস্তাব করেন। শহীদ- প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এটি প্রবর্তন করেন।
ভোরের সূর্যটা বাড়তে থাকে। রাজপথে মানুষের সমাগমে ভরে যায়। দিনের পর রাত আসে, বছরের পর বছর আসে। সময়ের চাকা দ্রুতগতিতে চলে। প্রেক্ষিতে গত বছরের জুলাই মাস থেকে ছাত্র-জনতা কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলন ক্ষমতালোভী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফা দাবিতে পরিণত হয়। শেখ হাসিনা দলবলসহ ভারতে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ৮ই আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই কার্যক্রম বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার উজ জামান বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
ড. ইউনূস কাজের মানুষ। কাজকে তিনি বড় মনে করেন। কাজই তাকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আগামী দিনে তিনি সুন্দর, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য উৎসবমুখর নির্বাচন জাতিকে উপহার দিবেন। সেই লক্ষ্যেই তিনি কাজ করছেন। বাস্তবায়ন করবেন মানবতাবিরোধী আচরণের বিচার, সংস্কার ও জুলাই ঘোষণাপত্রের সমাধান করবেন। ইতিমধ্যে লেখক হিসেবে তার তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। “পথের বাধা সরিয়ে দিন মানুষকে এগুতে দিন” “ব্যাংকার টু দ্যা পাওয়ার” “তিন শূন্য”। এসব গ্রন্থ পাঠক সমাজে দারুণভাবে সমাদৃত হয়েছে। মহান আল্লাহপাকের কাছে তার সুস্থতা কামনা করি। জন্মদিনের শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন।
রাজু