ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

শুভ জন্মদিন : দারিদ্র্যবিমোচনের দূত থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস 

সালাহউদ্দিন সালমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০২:৪৫, ২৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ০২:৪৬, ২৮ জুন ২০২৫

শুভ জন্মদিন : দারিদ্র্যবিমোচনের দূত থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস 

বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধু একজন ব্যাংকার নন—তিনি দারিদ্র্য বিমোচনের দর্শন ও বিশ্বমডেল নির্মাতা। আজ ২৮ জুন তাঁর জন্মদিন। এ দিনে তাঁকে স্মরণ করা মানে শুধু এক ব্যক্তিকে নয়, বরং এক আন্দোলনকে সম্মান জানানো। ক্ষুদ্রঋণ ধারণাকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়ে তিনি বাংলাদেশকে নতুনভাবে চিনিয়েছেন।

ড. ইউনূসের জন্ম ১৯৪০ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাথুয়া গ্রামে। শৈশব থেকেই মেধা, সাহিত্য, নাটক আর স্কাউটিংয়ে ছিলেন উজ্জ্বল। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় সাফল্য, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে বিএ ও এমএ শেষ করে পূর্ণ বৃত্তিতে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৬৯ সালে ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি অর্জন করেন।

শিক্ষক হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েই সমাজের বাস্তবতা তাকে নাড়া দেয়। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে সরাসরি গ্রামবাসীর দুঃখ-কষ্ট দেখেই শুরু হয় তাঁর ক্ষুদ্রঋণ ভাবনা। তিনি বুঝলেন, দরিদ্রদের জন্য ছোট ঋণ হতে পারে বড় পরিবর্তনের হাতিয়ার। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ ব্যাংক—যা গরিব মানুষের জন্য আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে আসে। “সংহতি দল” পদ্ধতিতে একে অপরের জামিনদার হয়ে ঋণ শোধের সামাজিক বন্ধন তৈরি করে, যা বিশ্বব্যাপী অনুকরণীয় মডেল হয়ে ওঠে।

ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৬ সালে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে—বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নোবেল জয়। তিনি প্রমাণ করেছেন দারিদ্র্য কোনো নিয়তি নয়, বরং উদ্যোগ, উদ্ভাবন আর সমবায়ে জয় করা সম্ভব।

জীবনে পেয়েছেন ৪৮টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম ও কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডালসহ বিশ্বের নানা সম্মাননা।

আজ তাঁর জন্মদিনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়—তিনি বর্তমান গঠিতব্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থনীতি, উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি জাতির জন্য নতুন এক দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেবল একজন নোবেল বিজয়ী নন—তিনি দারিদ্র্যবিমোচনের প্রতিশ্রুতি, সামাজিক ব্যবসার রূপকার, বাংলাদেশের গর্ব। আজ তাঁর জন্মদিনে তাঁকে জানাই বিনম্র শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা।

রাজু

×