ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

ঠাকুরগাঁওয়ে টিসিবি পণ্য বিতরণে অস্পষ্টতা, সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড়

আপেল মাহমুদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২৮ জুন ২০২৫

ঠাকুরগাঁওয়ে টিসিবি পণ্য বিতরণে অস্পষ্টতা, সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড়

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পণ্য বিতরণে অনিয়ম, অস্পষ্টতা এবং তথ্যগত গড়মিল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কার্ডধারী উপকারভোগীদের অভিযোগ, ২০২৫ সালের মে মাসের বরাদ্দ “বেপাত্তা” বিতর্কের সূত্রপাত হয়, ২৮ জুন (শুক্রবার) রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আব্দুল মান্নানের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে দেওয়া এক ঘোষণার মাধ্যমে।

তিনি ফেসবুকে ঘোষণা দেন, “২৮ জুন (শনিবার) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত ১-৯ নম্বর ওয়ার্ডের টিসিবি পণ্য বিতরণ করা হবে। স্থান, রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদ।”

কিন্তু ওই ঘোষণায় স্পষ্ট উল্লেখ ছিল না, বিতরণটি মে মাসের নাকি জুন মাসের বরাদ্দ। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়, যা আরও ঘনীভূত হয় সচিবের পোস্টে স্থানীয় টিসিবি ডিলার আল আমিনের এক মন্তব্যে।

তিনি সচিব মান্নানের পোস্টে লেখেন “আগামীকাল কি মে মাসের বরাদ্দ, নাকি জুন মাসের বরাদ্দ? যদি জুন মাসের হয়, তাহলে মে মাসের বরাদ্দ কোথায় গেলো?”

এই মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় কার্ডধারীরা। একজন উপকারভোগী আহসান হাবিব জানতে চান, “আগামীকাল কি মে-জুন দুই মাস একসাথে দিবে নাকি ভাই? মে মাসেরটা তো পাইনি।”

অন্যজন নুর ইসলাম পরামর্শ দেন, “আগে ডিলারের কাছে জেনে নিতে হবে, তারপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করতে হবে।”

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (নেজারত শাখা) থেকে ২৪ জুন জারিকৃত অফিস আদেশ (স্মারক: ০৫.৫৫.৯৪০০.০০০.০০.০০০.২৩-৪০৬) অনুযায়ী, মে মাসে রুহিয়ায় বরাদ্দপ্রাপ্ত কার্ডধারীর সংখ্যা ছিল ১,০৩৭ জন। এর মধ্যে ৬৩ জনের বরাদ্দ বিতরণ হয়নি, অর্থাৎ ‘অবিকৃত’ অবস্থায় রয়েছে। জুন মাসে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৭৪ জনের জন্য।

এই তথ্য অনুযায়ী স্পষ্ট, মে মাসের বরাদ্দের একটি অংশ বিতরণ হয়নি। প্রশ্ন হলো, সে বরাদ্দ এখন কোথায়? তা কি ফেরত পাঠানো হয়েছে, নাকি বণ্টন ছাড়াই অন্যভাবে সরিয়ে ফেলা হয়েছে?

সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিতোষ রবি বলেন, “টিসিবি কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা মতে এপ্রিলের বরাদ্দ অ্যাপসের বাইরে অফলাইনে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড ছাড়াই বিতরণ হয়। এজন্য মে মাসে ওটাই বিক্রি হয় নি মর্মে সাইটে শো করায় এজন্যই রুহিয়াবাসী মে মাসের বরাদ্দ পায় নাই। বরাদ্দ নির্ভর করে টিসিবি কর্তৃপক্ষের উপর এটাতে আমাদের কোনো হাত নেই।”

অন্যদিকে, টিসিবি ডিলার আল আমিন নিজেই বলেন, “মানুষ প্রতিদিন জানতে চায়। তাই আমিও জানতে চেয়েছি পোস্টে। কারণ ডিলারের কাছে যেই তালিকা আছে, সেই তালিকা ভিন্ন ধরনের। 

রিপোর্ট প্রকাশের সময় পর্যন্ত এ বিষয়ে রুহিয়ার টিসিবি ডিলার প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাজু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাজেদুর রহমান সাজু ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ইউএনও খাইরুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উপকারভোগী রুনা আক্তার বলছেন, “এটি কেবল খাদ্য নয়, টিকে থাকার উপায়।” এই ধরনের বিতরণে ধোঁয়াশা শুধু প্রশাসনিক গাফিলতি নয়, সামাজিক অবিচারও বটে।

নোভা

×