
একত্রিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে ফোর্ডো ভূগর্ভস্থ কমপ্লেক্সের স্যাটেলাইট চিত্র—যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক স্থাপনাটিতে হামলার আগে এবং পরে।
ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে রাজি নয়, আর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় প্রকৃতপক্ষে কতটা ক্ষতি হয়েছে—তা এখনো যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ইরানের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালানোর মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়—ফোর্ডো ও নাটাঞ্জের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলোতে আসলে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।
*দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস* ও *সিএনএন* একটি প্রাথমিক ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ) প্রতিবেদন ফাঁস করে, যেখানে বলা হয়, ক্ষতির মাত্রা মাঝারি থেকে গুরুতর হতে পারে। তবে এটি ছিল খুবই প্রাথমিক পর্যায়ের মূল্যায়ন, যার প্রতি “আত্মবিশ্বাসের মাত্রা কম” বলেই উল্লেখ করা হয়।
এই মূল্যায়নের গুরুত্ব অনেক, কারণ এটি নির্ধারণ করবে—যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলায় ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ক্ষমতা, অর্থাৎ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা, কয়েক বছরের জন্য হলেও থেমে গেছে কি না।
ইসরায়েল বহু আগে থেকেই—তেমন কোনো প্রমাণ ছাড়া—ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক বোমা তৈরির অভিযোগ করে আসছে। অন্যদিকে ইরান শুরু থেকেই দাবি করে, তাদের কর্মসূচি পুরোপুরি বেসামরিক। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও মার্চ মাসে বলেছে, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে নেই। কিন্তু ট্রাম্প জুনের শুরুতে বলেন, ইরান শিগগিরই পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়ে ফেলবে।
এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য ও দাবি-প্রতিদাবির মধ্যে একটি বিষয় স্পষ্ট—তেহরান বলছে, তারা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।
তাহলে সামনে কী?
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলায় আসলে কতটা ক্ষতি হয়েছে? তারা কি ইরানকে আবার কর্মসূচি পুনরায় চালুর সুযোগ দেবে? আর ২০১৫ সালের সফল কূটনৈতিক চুক্তি—যা ট্রাম্প বাতিল করেন—তা কি আবার পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব?
ইরান কী চায়?
মার্কিন হামলার পর প্রথম বার্তায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, এই হামলায় পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে "তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি।" আল জাজিরার প্রতিবেদক রেসুল সেরদার জানান, খামেনি বলেন “বেশিরভাগ সাইট অক্ষত আছে এবং ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে।”
ইরানের পরমাণু সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামি মঙ্গলবার বলেন, “পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি আমরা আগেই নিয়ে রেখেছিলাম, যাতে উৎপাদন বা সেবায় কোনো বিঘ্ন না ঘটে।”
যদিও নাটাঞ্জ ও ফোর্ডো—ইরানের একমাত্র পরিচিত সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো—প্রচুর ক্ষতির শিকার হয়েছে বলে স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণে দেখা গেছে। পাশাপাশি ইসরায়েলের হামলায় ইরানের একাধিক শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।
ডিআইএ-র প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলায় ইরানের কর্মসূচি কিছু মাসের জন্য পিছিয়ে গেছে মাত্র। তারা আরও জানায়, ইরান আগেই সেই সব কেন্দ্রে সংরক্ষিত ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছিল, যা ইরানিও কর্মকর্তারাও দাবি করছেন।
জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থা আইএইএ জানিয়েছে, ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় প্রায় ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে—যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের খুব কাছাকাছি।
বুধবার ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ইরান কি ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছে? তিনি বলেন, “আমাদের মনে হয়, ওদের সবকিছুই সেখানেই ছিল, সরিয়ে নেওয়ার সময় পায়নি।” পরবর্তীতে তিনি আরও বলেন, “আমরা এত দ্রুত ও শক্তিশালীভাবে আঘাত করেছি, ওদের সরানোর সুযোগই হয়নি।”
মুমু