
ছবি: প্রতীকী
আমরা সবাই একটু স্বস্তির খোঁজে থাকি। চাই এমন এক জীবন, যেখানে ঝুঁকি কম, চাপ কম, এবং যেখানে আমরা নিজের মতো করে শান্তিতে থাকতে পারি। কিন্তু সমস্যা হলো, এই শান্তির খোঁজ করতে করতে আমরা একটা অদৃশ্য ফাঁদে আটকে যাই, যাকে বলা যায় “আরামের জীবন”।
প্রথমে এই আরাম ভালো লাগে। কিন্তু ধীরে ধীরে এটা আমাদের সাহস, কৌতূহল, আর স্বপ্ন দেখার ক্ষমতাকে শেষ করে দেয়। আমরা যে মানুষটা হতে পারতাম, সেই মানুষটা আর হয়ে উঠতে পারি না।
প্রত্যেক মানুষের জীবনে কিছু স্বপ্ন থাকে। কেউ বই লিখতে চায়, কেউ নিজের ব্যবসা শুরু করতে চায়, কেউ হয়তো নতুন কোন জায়গায় যেতে চায় বা কিছু শিখতে চায়। কিন্তু অনেকেই এসব স্বপ্নকে শুধু মনের ভেতর পুষে রাখে। কারণ তারা ভয় পায় "যদি ব্যর্থ হই?", "যদি কেউ সমালোচনা করে?", "যদি কিছু না হয়?"
এভাবেই অনেকেই সেই কাজটা শুরুই করতে পারে না, যা তাদের জীবন বদলে দিতে পারত।
বিশ্বের অনেক সফল মানুষদের গল্প যদি দেখি, তাহলে দেখা যাবে তারা কখনো সহজ রাস্তা বেছে নেননি। বরং তারা সেই রাস্তা বেছে নিয়েছেন যেটা কঠিন, অনিশ্চিত, আর মাঝে মাঝে খুবই একাকী।
তারা জানতেন, আরামের মধ্যে থেকে বড় কিছু অর্জন করা যায় না। তাই তারা অস্বস্তিকে গ্রহণ করেছেন। নিজেদের সীমার বাইরে গিয়েছেন। আর ঠিক এখানেই তারা পেয়েছেন প্রকৃত শক্তি।
আমরা অনেকেই ভেবে বসি “যখন প্রেরণা পাব তখন শুরু করব।” কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রেরণা আসে না। একে তৈরি করতে হয় কাজের মাধ্যমে। যেদিন আপনি ক্লান্ত, বিষণ্ণ, অনিচ্ছুক সেই দিনেও যদি আপনি কাজ করেন, সেটাই আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আরামদায়ক জীবন ধীরে ধীরে আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে কমিয়ে দেয়। আমরা তখন আর স্বপ্ন দেখি না, শুধু নিরাপত্তার খোঁজ করি। অনেকেই এমন চাকরিতে আটকে থাকে যা তারা ভালোবাসে না। এমন সম্পর্ক টেনে নিয়ে চলে যা তাদের দম বন্ধ করে দেয়। শুধু একটুখানি নিরাপত্তা বা সামাজিক স্বীকৃতির জন্য তারা নিজেদের সত্যিকারের ইচ্ছাকে মাটি চাপা দিয়ে রাখে।
আর এভাবেই একজন মানুষ একসময় শুধু বেঁচে থাকে, জীবন উপভোগ করে না।
হেনরি ফোর্ড বা অ্যান্ড্রু কার্নেগির মত ইতিহাস গড়া মানুষদের গল্প পড়লে দেখা যায়, তারা একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছেন। লোকে তাদের নিয়ে হাসাহাসি করেছে। তারা অর্থ হারিয়েছেন, আত্মবিশ্বাস হারিয়েছেন। কিন্তু থেমে যাননি।
তারা বুঝেছিলেন, সবচেয়ে বড় শক্তি আসে সেই সময় থেকেই, যখন কিছুই ঠিকঠাক চলে না, যখন ভেতরটা বলে “থেমে যাও”, কিন্তু আপনি তবুও সামনে এগিয়ে যান।
এমন অনেক প্রতিভাবান মানুষও আছেন, যারা কেবল এই অস্বস্তির ভয়ে তাদের প্রতিভা চাপা দিয়ে রেখেছেন। তারা লিখতে পারেন, আঁকতে পারেন, গাইতে পারেন, কিন্তু তারা চেষ্টা করেন না। কারণ তারা ব্যর্থতার ভয়ে আরামদায়ক জীবনে থেকে যান। ফলে তাদের নামও কেউ মনে রাখে না।
আপনি যদি মনে করেন, "আমার জীবনে কি এর চেয়ে কিছু হতে পারত?" তাহলে উত্তর হলো— হ্যাঁ, পারত। কিন্তু তার জন্য আজ থেকেই কিছু একটা শুরু করতে হবে। সবকিছু একদিনে পাল্টে যাবে না। কিন্তু একটুখানি পরিবর্তন করলেই পথ তৈরি হয়।
প্রথম ধাপ হলো একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করা। আপনি কী হতে চান? কী করতে চান? সেটা পরিষ্কারভাবে ভেবে, কাগজে লিখে ফেলুন। তারপরে সেই লক্ষ্যকে ধাপে ভাগ করুন। আর প্রতিদিন সেই ছোট ধাপগুলো নিয়ে কাজ করুন।
এই ধাপে ধাপে অগ্রগতি হয়তো ধীর মনে হবে। কিন্তু প্রতিটি ধাপই আপনাকে গন্তব্যের কাছাকাছি নিয়ে যাবে। মনে রাখবেন, কেউই হঠাৎ করে সাফল্য পায় না। সাফল্য আসে ছোট ছোট নিরব কাজের মধ্য দিয়ে।
যখন চারপাশে কিছুই ভালো যাচ্ছে না, তখনও যদি আপনি নিজেকে সামলে রাখেন, সেটাই হয় আসল শক্তি। একে বলে “স্থিতিস্থাপকতা”— যে মানসিক শক্তি আপনাকে আবার দাঁড়াতে শেখায়, বারবার।
যেমন একটা বড় গাছ বড় হয় শুধু পানি দিয়ে নয়— তা বড় হয় ঝড়ঝাপটা সামলিয়ে। তেমনি আপনিও বড় হবেন যদি আপনি প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে ভয় না পান।
জীবনে যেকোনো বড় পরিবর্তনের আগে আসে একটি পরীক্ষা। হয়তো আপনি এখন সেই পরীক্ষার মধ্যেই আছেন। হয়তো এখনই সময় আপনার নতুন অধ্যায় শুরুর। এখনই সময় আরামের আবরণ ফেলে দিয়ে চ্যালেঞ্জকে বেছে নেওয়ার। কারণ, আরাম নয়— চ্যালেঞ্জই আপনাকে গড়ে তুলবে। আপনি কি সেই সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত?
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/VUhiKnoujm4?si=iIHAKzJyR1q2BXtb
এম.কে.