ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

কানাডার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করছেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ২৮ জুন ২০২৫

কানাডার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করছেন ট্রাম্প

ছ‌বি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি কানাডার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য আলোচনা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি এ সিদ্ধান্ত জানান।

তিনি বলেন, কানাডা যেভাবে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর কর আরোপ করছে, তা ‘গভীরভাবে আপত্তিকর’। এ কারণেই আলোচনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার ফলে দুই দেশের মধ্যে একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া থমকে গেল, যা জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল।

সম্প্রতি দুই দেশ একে অপরের পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছে। বছরের শুরুতে ট্রাম্প একটি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেন এবং কানাডার বিরুদ্ধে ‘অর্থনৈতিক শক্তি প্রয়োগ করে’ দেশটি ‘অধিগ্রহণের’ হুমকিও দেন।

শুক্রবার ট্রাম্প বলেন, কানাডার ‘অত্যন্ত অন্যায্য করনীতি’র কারণে তিনি আলোচনা বন্ধ করছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কানাডার ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণাও দেবেন বলে জানান তিনি।

তিনি লিখেছেন,

"আমরা কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ে সব ধরনের আলোচনা এই মূহূর্ত থেকে বন্ধ করছি। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করতে গেলে কী শুল্ক দিতে হবে, তা আমরা আগামী সাত দিনের মধ্যে জানিয়ে দেব।"

তবে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এ বিষয়ে আরও নমনীয় অবস্থান নিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন,

"আমরা জটিল এই আলোচনা চালিয়ে যাব কানাডার স্বার্থ রক্ষার জন্য।"

কানাডা সম্প্রতি বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর ৩% ডিজিটাল সার্ভিসেস ট্যাক্স চালু করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষের বড় কারণ। এই কর আগামী সোমবার থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে।

এই করের ফলে অ্যামাজন, অ্যাপল ও গুগলের মতো আমেরিকান কোম্পানিগুলোর বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার খরচ বাড়বে বলে ধারণা ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর।

তবে কানাডা বলেছে, তারা এই করনীতি বাণিজ্য আলোচনার অংশ হিসেবেই বিবেচনা করতে চেয়েছিল।

নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী কার্নি ও ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে উষ্ণ হওয়ায় অনেকে আশাবাদী ছিলেন আলোচনায় অগ্রগতি হবে। কিন্তু ট্রাম্পের হঠাৎ ঘোষণা সেই আশায় ধাক্কা দিল।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প এমন হুমকি মাঝেমধ্যে দিয়ে থাকেন যাতে আলোচনায় চাপ সৃষ্টি করা যায় কিংবা আলোচনার গতি বাড়ে।

গত মাসেও তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিয়েছিলেন, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই তা প্রত্যাহার করেন।

কানাডার চেম্বার অব কমার্সের প্রধান নির্বাহী কানডেস লেইং বলেন,

“আলোচনার সময় শেষ মুহূর্তে এমন চমক আশা করাই যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার পরিবেশ কিছুটা ভালো ছিল, আমরা আশা করছি ইতিবাচক অগ্রগতি হবে।”

যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে কানাডার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র কানাডা থেকে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি করেছে।

তবে চলতি বছর ট্রাম্প নতুন করে ২৫% শুল্ক আরোপ করেন সীমান্তে মাদক পাচার নিয়ে উদ্বেগের কথা বলে।

গাড়ি, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর নতুন শুল্ক দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক জটিল করে তুলেছে। এসব খাতে উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপে পণ্য কয়েকবার করে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডা সীমান্ত পার হয়, ফলে অতিরিক্ত শুল্কে সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে।

ব্যবসায়ী মহলের প্রবল আপত্তির মুখে ট্রাম্প পরে কিছু পণ্যের জন্য ছাড় দেন। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কানাডাও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বসিয়েছে।

শুক্রবার ট্রাম্প আলোচনা বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর মার্কিন শেয়ারবাজার কিছুটা পড়ে গেলেও দিন শেষে আবার ঘুরে দাঁড়ায়। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক দিনশেষে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়।

সূত্র: বিবিসি

এম.কে.

×