
ছবি: প্রতীকী
মানুষ কখনও নিজ ইচ্ছায়, কখনও আবার মানসিক চাপে একা থাকতে পছন্দ করে। কেউ কেউ স্বভাবে একাকী, আবার কেউ আগে মানুষের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করলেও ধীরে ধীরে সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন। এই একাকিত্ব কখনও ব্যক্তিত্বের অংশ, কখনও মানসিক রোগের লক্ষণ।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষণ্নতা একটি গুরুতর মানসিক রোগ, যা মানুষের মনের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী হতাশা সৃষ্টি করে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তি আগের প্রিয় কাজগুলোতেও আনন্দ খুঁজে পান না, মানুষজনের সঙ্গে মিশতে চান না, এবং ধীরে ধীরে নিজেকে একা করে ফেলেন। কখনও মনে হয়, জীবন অর্থহীন, এমনকি আত্মহত্যার চিন্তাও তাকে ঘিরে ধরে।
সামাজিক ভীতি বা সোশ্যাল এংজাইটিতেও মানুষ একা থাকতে পছন্দ করে। তারা সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে অস্বস্তি বোধ করেন, নিজেকে উপস্থাপন করতে সংকোচ বোধ করেন, মনে হয় সবাই তাকে লক্ষ্য করছে বা হাসছে। ফলে তারা এ ধরনের পরিবেশ এড়িয়ে চলেন।
আরেকটি রোগ, ওসিডি (অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার), যেখানে মানুষ পরিচ্ছন্নতা ও নিয়ম নিয়ে অতিরিক্ত সচেতন হয়ে পড়ে। তারা মনে করেন বাইরে গেলে জীবাণু বা ময়লা লেগে যাবে। তাই বাইরে যাওয়া বন্ধ করে ঘরেই থাকতে শুরু করেন। কেউ কেউ তো বাইরের কাউকেও ঘরে ঢুকতে দেন না।
আবার নেগেটিভ সেলফ ইমেজ বা আত্মবিশ্বাসের অভাব থেকেও মানুষ একা হয়ে যায়। কেউ যদি নিজেকে দেখতে খারাপ মনে করেন, অথবা জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা বা চাকরি হারানোর মতো পরিস্থিতির জন্য নিজেকে ছোট মনে করেন, তবে সমাজের সামনে যেতে চান না।
সিজোফ্রেনিয়া নামে এক মানসিক রোগেও মানুষ চুপচাপ হয়ে যায় এবং বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করেন, কেউ তার ক্ষতি করতে চায়, ফলো করছে কিংবা বিষ দিচ্ছে। ফলে ভয় ও সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তিনি একাকী হয়ে পড়েন।
শিশুদের ক্ষেত্রেও দেখা যায়— কেউ কেউ বাইরে গেলেই কান্নাকাটি করে, সামাজিক পরিবেশে অস্বস্তি বোধ করে। অনেক সময় অতিরিক্ত ‘অ্যাটাচমেন্ট’ বা মা-বাবার সীমাহীন শাসন ও নির্ধারিত রুটিনের কারণে শিশুরা সামাজিক বিকাশে পিছিয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডার-এ আক্রান্ত শিশুরা নির্দিষ্ট রুটিনে চলতে পছন্দ করে এবং একা থাকতে চায়।
প্রযুক্তি নির্ভরতা, বিশেষ করে মোবাইল ও গেমিং অ্যাডিকশন, অনেক কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্ককে একা করে ফেলেছে। তারা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ব্যস্ত থাকলেও বাস্তবে সামাজিক পরিবেশে অস্বস্তি বোধ করেন।
এছাড়া, কিছু মানুষের ব্যক্তিত্বই এমন— যেমন ‘ইন্ট্রোভার্ট’ বা ‘অন্তর্মুখী’, যারা একা থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আবার ‘ওসিপিডি’ বা খুঁতখুঁতে স্বভাবের মানুষও সামাজিকতা এড়িয়ে চলেন। তারা নিয়মমাফিক জীবনযাপন করতে এতটাই অভ্যস্ত যে দাওয়াত-অনুষ্ঠানগুলোতেও যেতে চান না।
তবে গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সামাজিক, বন্ধু-বান্ধবের সাথে যুক্ত থাকেন, তারা মানসিক চাপ কম নিতে পারেন। মানসিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে তাদের সামাজিকতা অনেক সাহায্য করে। তাই একা থাকাটাই খারাপ, এমন বলা না গেলেও, অতিরিক্ত একাকিত্ব হলে তা চিন্তার কারণ হতে পারে।
যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ হঠাৎ করে একা হয়ে পড়েন, সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে যান, তাহলে সেটা অবহেলা না করে গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। সময়মতো মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে অনেক জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/Lf6x_W1YX9U?si=J8syyE8jsamQnm5o
এম.কে.