
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে ইতিহাসের অন্যতম গোপন এবং ধ্বংসাত্মক এক সামরিক অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল—যার নাম দিয়েছে অপারেশন রেড ওয়েডিং। ঠিক যেন ‘গেম অব থ্রোনস’-এর berখ্যাত "Red Wedding"-এর বাস্তব সংস্করণ। গত ১৩ জুন শুরু হওয়া এ অভিযানে মাত্র ১২ দিনের মধ্যে ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্ব এবং পরমাণু বিজ্ঞানীদের একাংশকে একযোগে নিশানা করে হত্যা করা হয়।
এই অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের সামরিক নেতৃত্বকে একধাক্কায় অচল করে দেওয়া এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করে দেওয়া। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ একাধিক মাস ধরে পরিকল্পনা চালায়, যার অংশ হিসেবে ইরানের ভেতরে গোপনে ড্রোন, বিস্ফোরক ও গুপ্তচর ঢোকানো হয়। এমনকি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নিজের ছেলের বিয়ের আয়োজন স্থগিত রেখে সেই অনুষ্ঠানকে সামনে এনে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মনোযোগ ভিন্নখাতে ঘুরিয়ে দেন।
১৩ জুন সকালে শুরু হওয়া মূল হামলায় ২০০টির বেশি যুদ্ধবিমান ও ড্রোন ব্যবহার করে প্রায় ৯০০টি টার্গেট-এ আঘাত হানা হয়। এতে ৩০ জনের বেশি সামরিক কমান্ডার ও ১১ জন শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা। একই সময়ে চলমান আরেকটি অভিযান ‘অপারেশন নার্নিয়া’-এর মাধ্যমে ইরানের ভেতরে ৯ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে তাদের নিজ নিজ বাসভবনে হত্যা করা হয়।
এই গোয়েন্দা-চালিত অভিযানে ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল কারখানা, পারমাণবিক স্থাপনা এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাগুলোকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়। ইসরায়েলি বাহিনীর মতে, এ অভিযান ইরানকে কয়েক দশক পিছিয়ে দিয়েছে তার পরমাণু সক্ষমতা অর্জনের পথে।
হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েলের কিছু স্থাপনায়, যদিও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সীমিত ছিল। এরপর ১২ দিনব্যাপী সংঘর্ষ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। তবে যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইরান অভ্যন্তরীণভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করে তোলে এবং পরমাণু কার্যক্রম পুনরুদ্ধারে প্রস্তুতি নিতে থাকে।
এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার এই সংঘাত পুনরায় জ্বলে উঠতে পারে যেকোনো সময়। এই হামলা কেবল মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তাকে নাড়িয়ে দিয়েছে না, বরং পুরো বিশ্বে পারমাণবিক উত্তেজনার নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
মুমু ২