
ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে নারীদের মধ্যে স্থূলতা ও ক্যানসারের সম্পর্ক এখনও অনেকাংশে অজ্ঞাত থেকে গেছে। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, এটি হওয়া উচিত নিয়মিত আলোচনার বিষয়। স্তন ক্যানসার থেকে শুরু করে ওভারিয়ান (ডিম্বাশয়) ক্যানসার পর্যন্ত—অতিরিক্ত দেহের চর্বি বড় ভূমিকা রাখে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, ধূমপানের পর স্থূলতা এখন নারীদের ক্যানসারের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিরোধযোগ্য কারণ হয়ে উঠছে। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির (ACS) তথ্য অনুযায়ী, নারীদের অর্ধেকেরও বেশি ক্যানসারের পেছনে অতিরিক্ত ওজন দায়ী। অথচ অধিকাংশ নারীই এটি সম্পর্কে সচেতন নন।
সাধারণত স্থূলতা বলতে হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস বোঝানো হলেও CDC-র তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রায় পাঁচ লাখ ক্যানসার রোগীর ওজন বেশি ছিল। কেবল স্তন ক্যানসার নয়—এন্ডোমেট্রিয়াল, ওভারিয়ান, লিভার এবং অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারও যুক্ত হয়েছে এই তালিকায়। উদ্বেগের বিষয় হলো, ৫০ বছরের কম বয়সী নারীদের মধ্যেও এসব ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ছে।
কীভাবে অতিরিক্ত চর্বি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়?
WHO বলছে, মেনোপজ-পরবর্তী সময়ে নারীদের দেহে চর্বি টিস্যুই হয়ে ওঠে প্রধান ইস্ট্রোজেন উৎপাদক। এই অতিরিক্ত হরমোন স্তর স্তন ও এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়াও, অতিরিক্ত চর্বি ইনসুলিন মাত্রা বৃদ্ধি ও দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে—যা ক্যানসারের বড় কারণ।
CDC জানিয়েছে, প্রতি ৫ ইউনিট BMI বৃদ্ধিতে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারের ঝুঁকি ৫০-৬০ শতাংশ বেড়ে যায়।
নারীদের ক্যানসার ঝুঁকি যেভাবে বাড়ায় স্থূলতা—৭টি গুরুত্বপূর্ণ দিক:
ওজন বৃদ্ধিতে ক্যানসার ঝুঁকি: আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির তথ্য মতে, নারীদের ৫০%-এর বেশি ক্যানসার অতিরিক্ত ওজনের কারণে হয়।
মেনোপজ পরবর্তী স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি: মেনোপজের পর অতিরিক্ত চর্বি ইস্ট্রোজেন বাড়ায় এবং স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বহুগুণ করে তোলে।
এন্ডোমেট্রিয়াল ও ওভারিয়ান ক্যানসারের সংযোগ: WHO জানায়, ৯০% টাইপ-১ এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারের পেছনে স্থূলতা দায়ী।
ক্যানসার চিকিৎসা ও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা হ্রাস: স্থূলতা ১৭% পর্যন্ত মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
তরুণ নারীদের মধ্যে ঝুঁকি বেড়ে চলেছে: CDC-র তথ্য অনুযায়ী, ৫০ বছরের কম নারীদের মধ্যে ওজন-সম্পর্কিত ক্যানসারের হার পুরুষদের তুলনায় দ্রুত বাড়ছে।
ওজন কমালে ঝুঁকি কমে: দেহের ওজনের মাত্র ৫-১০ শতাংশ কমালে স্তন ও এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
পেটের মাপও একটি বড় ইঙ্গিত: কেবল কোমরের মাপ বড় হলে ঝুঁকি অন্তত ১১% বেড়ে যায়—even শারীরিকভাবে সক্রিয় নারীদের ক্ষেত্রেও।
প্রতিরোধমূলক পরামর্শ:
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম ও চিকিৎসকের পরামর্শে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়। প্রতিদিন অন্তত ১৫০ মিনিট শরীরচর্চা, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও চিনিযুক্ত পানীয় কমানো, এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। ছোট ছোট পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
সূত্র: www.moneycontrol.com
নোভা