
ছবি: জনকণ্ঠ
প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও কুয়াকাটা পৌরসভায় গড়ে ওঠেনি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। পর্যটন শহর হিসেবে পরিচিত এই পৌরসভার প্রবেশ মুখেই গড়ে উঠেছে বড়সড় ময়লার ভাগাড়। খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলায় শহরে প্রবেশের সময়ই পর্যটকদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধের। এতে পরিবেশ যেমন হুমকির মুখে পড়েছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্য।
জানা যায়, ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর কুয়াকাটা পৌরসভার যাত্রা শুরু হয়। দ্বিতীয় শ্রেণির পৌরসভাটির জনসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার এবং মোট ভোটার সংখ্যা ৯ হাজার ৫০০ জন। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌরসভায় এখন পর্যন্ত বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে পৌর শহরের ২নং ওয়ার্ডের খাজুরা এলাকাকে ময়লার ভাগাড় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার বাসাবাড়ি, হোটেল-রিসোর্ট, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের আবর্জনা পিকআপ ও ভ্যানে করে এনে ফেলা হচ্ছে প্রবেশমুখের খোলা জায়গায়। সেখানে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, এমনকি কুকুর-শুকরের মরদেহও দেখা গেছে। দুর্গন্ধে নাক চেপে যাতায়াত করছেন যানবাহনের চালক ও পথচারীরা। দাঁড়ানো তো দূরের কথা, এক মিনিটের জন্য ওই এলাকায় থাকা দায় হয়ে উঠেছে।
ময়লার ভাগাড়কে ঘিরে গড়ে উঠেছে অনানুষ্ঠানিক একটি কর্মসংস্থান ব্যবস্থাও। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শতাধিক টোকাই স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই বর্জ্যের স্তূপ থেকে প্লাস্টিক, লোহা ও অন্যান্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য দ্রব্য সংগ্রহ করছে। কেউ কেউ মাসিক ও সাপ্তাহিক বেতনে কাজ করছেন ভাগাড় এলাকায়।
এ বিষয়ে কুয়াকাটার পরিবেশবাদী সংগঠন বিডিক্লিনের সমন্বয়কারী আসাদুজ্জামান মিরাজ বলেন, “পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল। যেভাবে খাজুরা এলাকায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, তাতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।” তিনি পৌরসভার নিজস্ব জায়গায় বর্জ্য ডাম্পিংয়ের দাবি জানান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. মাঈনুল ইসলাম জানান, খোলা স্থানে বর্জ্য ফেলার কারণে বাতাসে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। এতে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের রোগ এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ছে। বায়ু দূষণের কারণে এলার্জি ও এজমার মতো সমস্যাও প্রকট হচ্ছে। এছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্য নালায় পড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও কলাপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসীন সাদেক জনকণ্ঠকে জানান, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ইতোমধ্যে সরকারের কাছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য জমির আবেদন করা হয়েছে এবং আধুনিক ব্যবস্থাপনার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।” এটার সমাধানের জন্য আমরা ইতোমধ্যে পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড ৪৫ কোটি টাকা ব্যায়ে সিপিসিআর প্রজেক্টের মাধ্যমে এডিপির অর্থায়নে ৩.৫ একর জমির উপরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ডাম্পিং ব্যবস্থা হাতে নেয়া হয়েছে। আশাকরি দ্রুত এই ডাম্পিং ব্যবস্থার সমাধান হলে সমস্যার সমাধান হবে।
আবির