
আজ সেই মহৎ হৃদয়ের মানুষের জন্মদিন, যিনি শুধু এই দেশের জন্য নন, সমগ্র পৃথিবীর জন্য আশার এক উজ্জ্বল দীপ্তি হয়ে উঠেছেন। তিনি এসেছিলেন এমন এক সময়ে, যখন বাংলাদেশ অস্থিরতা, হতাশা আর দিকভ্রান্তির ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। তিনি এসেছিলেন দুঃসময়ে, কিন্তু হয়ে উঠেছেন এক অবিনাশী রহমত। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, আলোর পথ কখনও নিভে যায় না—যত আঁধারই হোক।
আমি তাকে প্রথম দেখেছিলাম আজহারে, এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে। তার কণ্ঠের উচ্চারণ ছিল অদ্ভুত সম্মোহনী—তিনি বলেছিলেন, “তোমরা আজহারে এসেছো, তোমরা বিশ্বকে পরিবর্তন করতে পারবে।” সেই বাক্য আজও হৃদয়ে ধ্বনিত হয়, যেন এক অনন্ত প্রেরণার জ্যোতি। তার কথায় ছিল না কেবল আশ্বাস, ছিল বিপ্লবের ভিত, ছিল বিশ্বাসের বীজ। সেই মুহূর্তে আমি বুঝেছিলাম, মানুষ চাইলে সত্যিই মহাশক্তির প্রতীক হতে পারে—যদি তার অন্তরে থাকে স্বপ্ন ও সাহস।
ড. ইউনূস কেবল একজন অর্থনীতিবিদ নন, তিনি ছিলেন দারিদ্র্য দূরীকরণের এক মহাযাত্রার অগ্রদূত। তিনি ক্ষুদ্র ঋণের ধারণাকে দাঁড় করালেন এক বৈশ্বিক আন্দোলনের উচ্চতায়। গ্রামীণ ব্যাংকের হাত ধরে যাদের কণ্ঠ ছিল না, তারা কথা বলতে শিখল। যাদের হাতে ছিল না পুঁজি, তারা হয়ে উঠল উদ্যোক্তা। আর বাংলাদেশ—যে ছিল বিশ্বের প্রান্তে, তার নাম ছড়িয়ে পড়ল সম্মানের কেন্দ্রবিন্দুতে।
২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়ে তিনি শুধু দেশের গর্ব বাড়াননি, মানবতার ইতিহাসেও স্থায়ী আসন করে নেন। পৃথিবী জানলো, দারিদ্র্য শুধু আর্থিক সংকট নয়—এ এক সামাজিক ব্যর্থতা, যার মোকাবিলা করতে পারে সদিচ্ছা ও মানবতাবোধ।
আজ তাঁর জন্মদিনে হৃদয়ের গভীর থেকে প্রার্থনা করি—আল্লাহ যেন তাঁকে নেক হায়াত দান করেন। তিনি যেন সুস্থ থাকেন, বাঁচেন আরও বহু বছর, এবং এই দেশের, এই বিশ্বের ভবিষ্যৎকে পথ দেখান তাঁর মৃদু অথচ দুর্বার আলোয়।
ড. ইউনূস আমাদের চোখে শুধু একজন পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি নন—তিনি আমাদের স্বপ্ন, আমাদের শক্তি, আমাদের অনুপ্রেরণা। তিনি প্রমাণ করেছেন, একজন মানুষের চিন্তা যদি সত্য ও মানবতার পক্ষে দাঁড়ায়, তবে তা গোটা দুনিয়ার চেহারাই বদলে দিতে পারে।
আপনার জন্মদিনে, আপনাকে জানাই অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা, নিঃশব্দ ভালোবাসা, এবং কৃতজ্ঞতার গভীরতম নিঃশ্বাস।
আপনি ছিলেন আশীর্বাদ হয়ে, থাকুন আলোর দূত হয়ে…জন্মদিনের শুভেচ্ছা, ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
লেখক ও কলামিস্ট, শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর
রাজু