ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

অতীতের অবমাননা থেকে ইতিহাসের উচ্চাসনে: এক জন্মদিনের প্রতিধ্বনি

মহিউদ্দিন জাবের, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, সিলেট

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ২৮ জুন ২০২৫

অতীতের অবমাননা থেকে ইতিহাসের উচ্চাসনে: এক জন্মদিনের প্রতিধ্বনি

ছবি: সংগৃহীত

কখনও কখনও কবিতা আগাম ভবিষ্যতের ভাষা হয়ে ওঠে। মনে হয়, নজরুলের “চল চল চল, ধূপের ছায়া ছিন্ন করে...” পঙ্‌ক্তিগুলো যেন ছায়ার ভেতর দাঁড়িয়ে কাউকে ইঙ্গিত করে- যিনি বয়সের ভারে নয়, বিশ্বাসের জোরে এগিয়ে যান। আজ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যখন ৮৫ বছরে পা রাখলেন, সেই কবিতার ছায়া যেন ঠিক তাঁর পদচিহ্ন ছুঁয়ে যায়। কবি যেন তাকে উদ্দেশ্য করেই লিখেছিলেন। ক্লান্তি তাঁকে ছুঁতে পারেনি, সময় তাঁকে ঠেকাতে পারেনি। তিনি এগিয়েছেন নিজস্ব আলোতে, অনিবার্য এক অন্তর্গত সাহসে।

এই সাহস থেকেই জন্ম নিয়েছে ক্ষুদ্রঋণের ধারণা- যেখানে দারিদ্র্যকে দয়া নয়, মর্যাদার সঙ্গে মোকাবিলা করা হয়। গড়ে উঠেছে ‘গ্রামীণ ব্যাংক’, যা আজ আর শুধু একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়- হয়ে উঠেছে প্রান্তিক মানুষের আত্মবিশ্বাসের নাম। তাঁর ভাবনায় উঠে এসেছে 'সোশ্যাল বিজনেস'- যেখানে ব্যবসার লক্ষ্য মুনাফা নয়, মানুষের কল্যাণ। আর তাঁর 'থ্রি জিরো থিওরি'- দারিদ্র্যহীনতা, বেকারত্বহীনতা, কার্বনমুক্ত বিশ্ব- উন্নয়নের সংজ্ঞাকেই দিয়েছে নতুন ভিত্তি।

তবুও তার এই পথচলা মসৃণ ছিল না। বিশেষ করে হাসিনার শাসনামলে তিনি পরিণত হন অবমাননার লক্ষ্যবস্তুতে। মামলার জাল, প্রশাসনিক হেনস্তা, এবং প্রচারের অপচেষ্টা এক সময় তাঁকে প্রায় নিঃশব্দ করে ফেলেছিল। রাষ্ট্র যেন ভুলে গিয়েছিল, কার হাত ধরে বাংলাদেশের নাম প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল নোবেল মানচিত্রে।

কিন্তু ইতিহাসের নিজস্ব গতি আছে, আর তা কখনও একরৈখিক হয় না। ফ্যাসিবাদের জাঁতাকলে পিষ্ট সেই মানুষটিই আজ দেশের জনপ্রিয় সরকারপ্রধান। তাঁর নেতৃত্বে চলছে কাঠামোগত সংস্কার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান, রাষ্ট্র পরিচালনায় আসছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি। তিনি হয়ে উঠেছেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক- একজন নির্মাতা, যিনি নতুন এক রাষ্ট্রদর্শনের ভিত গড়ে তুলছেন নীরবে, অথচ দৃঢ়তায়।

এই জন্মদিন কেবল বয়সের আরেকটি সংখ্যায় পৌঁছানো নয়- এ এক দীর্ঘ সংগ্রামের পূর্ণতা, এক অভ্যন্তরীণ বিজয়ের প্রতিফলন। আমরা দেখেছি তাঁকে, সময়ের ঘূর্ণিতে অবহেলিত হতে, আবার দেখছি তাঁকেই, সেই সময়েরই শীর্ষে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিতে। এ যেন ইতিহাসের নিজস্ব ব্যাকরণে লেখা এক প্রতিশোধ, যেখানে অবজ্ঞার পরিণতি হয় শ্রদ্ধা, এবং নীরবতা একদিন হয়ে ওঠে কণ্ঠস্বর।

আমরা প্রত্যাশা করি- তাঁর অভিজ্ঞতা, দূরদৃষ্টি ও নীতিনিষ্ঠ নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। দুর্বল রাষ্ট্রযন্ত্র নয়, সচল একটি মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের যাত্রায় তাঁর ভূমিকা অনন্য হোক। তাঁর ‘থ্রি জিরো’ দর্শন শুধু আন্তর্জাতিক নীতিতে নয়, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্নের ভিতেও রোপিত হোক।

শুভ জন্মদিন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আপনি কেবল আমাদের অতীতের গর্ব নন- বর্তমানের দায়, এবং ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি।

সাব্বির

×