ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

গাজার বাজারে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:১২, ২৮ জুন ২০২৫

গাজার বাজারে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত

ছবিঃ সংগৃহীত

গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলীয় দেইর আল-বালাহ শহরের একটি বাজারে হামাসের পুলিশের উপর ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় অন্তত ১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন একজন চিকিৎসক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাদামাটা পোশাক ও মুখোশ পরা হামাস পুলিশ সদস্যরা বাজারে অতিরিক্ত দাম এবং ত্রাণ ট্রাক থেকে লুট করা পণ্য বিক্রি ঠেকাতে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলছিল। ঠিক তখনই ইসরায়েলি ড্রোন হামলা চালায়।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলার নিন্দা জানিয়ে একে “পাবলিক অর্ডার রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ ইউনিটের বিরুদ্ধে নতুন অপরাধ” বলে আখ্যায়িত করেছে।

ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বাজারের মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মরদেহ, আতঙ্কে চিৎকার করছেন ক্রেতারা, আর অ্যাম্বুলেন্স আহতদের উদ্ধার করছে।

দেইর আল-বালাহর আল-আকসা হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, হাসপাতালের মর্গে ১৮টি মরদেহ আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে কতজন পুলিশ সদস্য, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এই ঘটনার সময় গাজার সাধারণ জনগণ খাদ্যের জন্য লড়াই করছে, যেখানে মার্কিন ও ইসরায়েল-সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’-এর (GHF) বিতরণস্থলে প্রায় প্রতিদিনই গুলির ঘটনা ঘটছে, এবং বাজারে সীমিত পণ্য অত্যধিক দামে বিক্রি হচ্ছে।

এই ফাউন্ডেশনকে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র আরও ৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো GHF-এর বিরুদ্ধে মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন, “হামাস আবারও মানবিক সাহায্য নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে।” তিনি সেনাবাহিনীকে দুই দিনের মধ্যে একটি "কর্মপরিকল্পনা" দেওয়ার নির্দেশ দেন।

অন্যদিকে, হামাস এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, “ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করেছে কেবল উপজাতীয় উদ্যোগে গঠিত উচ্চতর কমিটি, যা হামাসের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।”

এদিকে বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানায়, ২ মার্চের পর প্রথমবারের মতো তাদের একটি চিকিৎসা সরঞ্জামের চালান গাজায় পৌঁছেছে, যাতে ২,০০০ ইউনিট রক্ত ও ১,৫০০ ইউনিট প্লাজমা রয়েছে। তবে সংস্থাটি একে “সাগরে একফোঁটা” বলেই অভিহিত করেছে।

বাজারে হামলার আগে মধ্যরাত থেকে গাজা জুড়ে ইসরায়েলি হামলায় আরও অন্তত ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানায় হামাস-চালিত সিভিল ডিফেন্স বিভাগ।

এর মধ্যে তিনজন গাজার কেন্দ্রীয় এলাকায় নেটজারিম করিডোর সংলগ্ন ওয়াদি গাজা ব্রিজের পাশে ত্রাণের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকাকালে নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, সেখানে উপস্থিত জনতার ওপর ড্রোন গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

অন্যদিকে, গাজার পশ্চিমাঞ্চলের একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া পাঁচজন এবং খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া একই পরিবারের পাঁচজন ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা এই ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখছে এবং এর জন্য নির্দিষ্ট স্থান ও সময়ের তথ্য চেয়েছে।

প্রসঙ্গত, ৭ অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫৬,২৫৯ জন মানুষ নিহত হয়েছেন।

মুমু

×