ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

তেহরানে মার্কিন-ইসরায়েলি হামলা: পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ব্যবস্থায় ভয়াবহ আঘাত

প্রকাশিত: ০৯:২১, ২৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৯:২৩, ২৮ জুন ২০২৫

তেহরানে মার্কিন-ইসরায়েলি হামলা: পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ব্যবস্থায় ভয়াবহ আঘাত

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান তেহরানে মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এই হামলা আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ব্যবস্থাকে ‘ভয়াবহ ক্ষতির মুখে ফেলেছে’ এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশের পক্ষ থেকে এটি আন্তর্জাতিক বিধিবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

গত শুক্রবার বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে ইউরেশীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের প্লেনারি অধিবেশনে ভিডিও বার্তায় অংশ নিয়ে পেজেশকিয়ান বলেন, ‘১৩ জুন ২০২৫ তারিখে ইসরায়েলি দখলদার শাসন একটি বর্বর ও বেআইনি সন্ত্রাসী হামলা চালায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর। এই হামলা তখনই ঘটে যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা চলছিল।’

তিনি বলেন, ইরানের যেসব পরমাণু স্থাপনায় হামলা হয়েছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) সরাসরি তত্ত্বাবধানে ছিল এবং ছিল পুরোপুরি বেসামরিক। ফলে এই হামলা শুধু আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গই করেনি, বরং পুরো বিশ্বব্যাপী পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ কাঠামোর বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

২৫ জুন ইরানের পার্লামেন্ট আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) সঙ্গে চলমান সহযোগিতা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানান, নতুন আইন অনুযায়ী ভবিষ্যতে IAEA-র সঙ্গে কেমন সম্পর্ক থাকবে, তা নির্ধারণ করবে দেশটির সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল। তবে সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়নি।

হামলা-পাল্টা হামলার রক্তাক্ত অধ্যায়

ইসরায়েল ১৩ জুন ইরানে প্রথম হামলা চালায়। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা জবাব দেয় তেহরান। এরপর ২২ জুন রাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও সংঘাতে যোগ দেয় এবং ইরানের তিনটি পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়।

এরপরের রাতেই ইরান যুক্তরাষ্ট্রের কাতারে অবস্থিত বৃহত্তম বিমান ঘাঁটি আল-উদেইদ এয়ার বেসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। যদিও ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই হামলায় কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং ঘাঁটিতে বড় কোনো ক্ষতিও হয়নি।

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ২৪ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে ইসরায়েল ও ইরান একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, যা কার্যকর হয় সেই রাত থেকেই।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সাম্প্রতিক হামলা-পাল্টা হামলা শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, গোটা বিশ্বের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ উদ্যোগ ও আস্থা ব্যবস্থাকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। বিশেষ করে যখন একপাক্ষিক হামলা আন্তর্জাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে থাকা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকেও রেহাই দেয় না, তখন বৈশ্বিক নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়ে।

 

সূত্র: আনাদোলু।

রাকিব

×