ছবি: সংগৃহীত
ঘুম আমাদের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। এটা শুধু আরাম বা ক্লান্তি দূর করার উপায় নয়—বিজ্ঞান বলছে, ঘুম হল শরীর ও মস্তিষ্কের রিচার্জ সিস্টেম। নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর ও মনের উপর ভয়ংকর প্রভাব পড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদে মৃত্যুঝুঁকিও বাড়াতে পারে।
ঘুম কতটুকু দরকার?
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য: ৭–৯ ঘণ্টা
টিনএজারদের জন্য: ৮–১০ ঘণ্টা
শিশুদের জন্য: ৯–১২ ঘণ্টা (বয়সভেদে ভিন্ন)
ঘুম না হলে কী হয়?
১. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস
ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, স্মৃতি সংরক্ষণ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ঘুম না হলে: মনোযোগ কমে যায়, সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়, শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়, মুড ওঠানামা করে (চঞ্চলতা, রাগ)
২. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
পর্যাপ্ত ঘুম রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের অভাবে দেহ ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে দুর্বল হয়ে পড়ে।
৩. হার্ট ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে
নিয়মিত কম ঘুম উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ায়। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে, যার ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে
৪. ওজন বৃদ্ধি ও হরমোন সমস্যা
ঘুম কম হলে: ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন (ঘ্রেলিন ও লেপটিন) ভারসাম্য হারায়। অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। মেটাবলিজম কমে যায়
৫. মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হয়
অনিদ্রা ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, প্যানিক অ্যাটাকের মতো মানসিক রোগের বড় কারণ। দীর্ঘ সময় ধরে ঘুম না হওয়া মানে হলো: মানসিক ভারসাম্য হারানো, আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল জানায়, ২৪ ঘণ্টা না ঘুমালে মানুষের প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা একজন মাতাল চালকের মতো হয়ে যায়। নেচার নিউরোসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, পরপর কয়েকদিন কম ঘুমালে মস্তিষ্কে ন্যাচারাল নিউরোন রিচার্জ হবার সময় পাওয়া যায় না।
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ওঠা। ঘুমানোর অন্তত ১ ঘণ্টা আগে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা। ক্যাফেইন ও ভারী খাবার সন্ধ্যার পর এড়িয়ে চলা। ঘুমের রুমে আলো কমিয়ে রাখা ও ঠান্ডা-নিরিবিলি পরিবেশ নিশ্চিত করা।
ঘুম কেবল বিশ্রামের সময় নয়, এটি শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য ‘মেইন্টেনেন্স টাইম’। এটি হালকা ভাবে নেওয়ার কিছু নয়। ঘুমের অভাব শুধু আপনার দিনটাই নয়, জীবনটাই ব্যালান্সের বাইরে নিয়ে যেতে পারে।
ফারুক
