আপনি কি সঠিক মানুষের সঙ্গে আছেন? সুস্থ সম্পর্ক চেনার ৩টি নিখুঁত উপায়

যদি আপনি অতীতে কঠিন সম্পর্কের মধ্য দিয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে অতীতের ভয় ও অবিশ্বাস নতুন একটি ভালো সম্পর্কেও আপনাকে তাড়িয়ে ফিরতে পারে। আবেগগত নিরাপত্তাহীনতা মস্তিষ্ককে এমনভাবে প্রভাবিত করে যে, তা নিরাপদ সম্পর্কেও হুমকি খোঁজে ফেলে।

আপনার আটাচমেন্ট স্টাইল—যা মূলত শৈশবকালীন অভিজ্ঞতা ও আগের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে গঠিত—তা-ও এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী হতে পারে। নতুন সম্পর্কে আপনি সত্যিই নিরাপদ কি না, তা বোঝা কঠিন হতে পারে; তবে সঠিক সম্পর্কে থাকলে আগের তুলনায় এক ধরনের স্বস্তি ও পার্থক্য আপনি টের পাবেন।

উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি anxiously attached হন, তবে একটি নিরাপদ সম্পর্কে সেই উদ্বেগ অনেকটাই প্রশমিত হয়। আর যদি আপনি avoidantly attached হন, তাহলে অন্তরঙ্গতা আর হুমকিস্বরূপ মনে হয় না।

নিচে রয়েছে তিনটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত লক্ষণ, যা আপনাকে নিশ্চিত করতে পারে যে আপনি একটি স্বাস্থ্যকর ও ভালোবাসাপূর্ণ সম্পর্কে আছেন:

১. আপনি তাদের ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ করেন না

যখন আপনি সঠিক মানুষের সঙ্গে থাকেন, তখন "সে কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসে?"—এই প্রশ্নটি খুব কমই মনে আসে। আপনি প্রতিটি টেক্সট বা কথোপকথন বিশ্লেষণ করে অতিরিক্ত ভাবেন না। নিজেকে ছোট বা অপর্যাপ্ত মনে হয় না।

এই সম্পর্কে আপনাকে নিজেদের প্রমাণ করতে হয় না, ভালোবাসা পেতে দৌড়াতে হয় না। আপনাদের সম্পর্ক একটি স্থির ও নির্ভরযোগ্য জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে, যেখানে একে অপরকে “ঠিক” করার চেয়ে একে অপরের সঙ্গে থাকা ও ধীরে ধীরে গড়ে ওঠার গুরুত্ব বেশি।

একটি ২০২৩ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, স্থিতিশীল সম্পর্কের মানুষরা মানসিকভাবে আরও সুস্থ থাকেন ও চাপ সামাল দিতে পারেন ভালোভাবে।

এ ধরনের সম্পর্কে একে অপরের আবেগগত উপস্থিতি ও সহানুভূতির ওপর বিশ্বাস গড়ে ওঠে। সঙ্গীর প্রতি এই আস্থা দুঃসময়ে বিশেষভাবে কাজ করে।

২. সম্পর্ক সহজ লাগে—সঠিক অর্থে

"ভালোবাসা সহজ হওয়া উচিত" কথাটি মানে এই নয় যে এতে কোনো পরিশ্রম নেই। বরং এটি বোঝায় যে সম্পর্কটি স্বাভাবিকভাবে গড়ে ওঠে এবং সময়ের সঙ্গে পরিপক্ব হয়।

মতবিরোধ হলেও তা সম্পর্কের অবনতি ঘটায় না। বরং এটি একে অপরকে বোঝার ও ঘনিষ্ঠতার নতুন সুযোগ তৈরি করে। আপনি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন এবং সেগুলো গুরুত্বসহকারে শোনা হয়।

সঠিক মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক মানে এই নয় যে জীবন হঠাৎ নিখুঁত হয়ে যায়, তবে সম্পর্কটি আর চাপ বা উদ্বেগের উৎস থাকে না।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, একটি সফল সম্পর্কে "পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া" গুরুত্বপূর্ণ। মানে আপনি অনুভব করেন—

• সঙ্গী আপনাকে বোঝেন

• আপনাকে সম্মান করেন

• প্রয়োজন হলে পাশে থাকেন

• আপনার অনুভূতি ও চিন্তাকে বৈধতা দেন

• আপনার মঙ্গল চেয়ে সহযোগিতা করেন

এই যত্নশীল মনোভাব একে অপরকে আরও যত্নবান করে তোলে, ফলে সম্পর্ক হয় শক্তিশালী।

৩. একসঙ্গে এগিয়ে যান, নিজের থেকে দূরে সরে না গিয়ে

সঠিক সম্পর্কে আপনি নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন না—বরং আরও বিকশিত হতে পারেন। সঙ্গী আপনাকে নিজের মতো করে বেড়ে উঠতে দেন এবং আপনিও তাকে সমানভাবে সমর্থন করেন।

২০২১ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, "Couple Flourishing Measure" অনুযায়ী একটি বিকশিত সম্পর্কের দুটি প্রধান দিক রয়েছে:

• Hedonic well-being: মানে ইতিবাচক আবেগ, সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা, তৃপ্তি ও উষ্ণতা

• Eudaimonic well-being: মানে ব্যক্তিগত বিকাশ, একে অপরের প্রতি সহানুভূতি এবং সম্পর্কের মাধ্যমে অর্থপূর্ণ জীবনের সৃষ্টি

এই ধরনের সম্পর্কে আপনি আর ভাবেন না, “আমরা কি সারাজীবন একসঙ্গে থাকবো?” বরং ভাবেন, “আমরা কীভাবে একসঙ্গে জীবনটাকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলবো?