ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

সরকার নির্ধারিত ভাড়া দিতে নারাজ যাত্রীরা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ০০:৩১, ২৮ জুন ২০২৫

সরকার নির্ধারিত ভাড়া দিতে নারাজ যাত্রীরা

বরিশাল জেলা পরিষদ কর্তৃক কীর্তনখোলা নদীর বেলতলা খেয়াঘাট ইজারা নিয়ে চরম বিপাকে পরেছেন ইজারাদার। জেলা পরিষদ থেকে নির্ধারিত ভাড়া উঠানোকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত বাগবিতন্ডার সৃষ্টি হচ্ছে খেয়াঘাট ইজারাদারের লোকজন ও সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে।
 
একদিকে সরকার নির্ধারিত ভাড়া দিতে নারাজ সাধারণ যাত্রীরা, অপরদিকে সরকারি কোষাগারে কোটি টাকারও বেশি জমা দিয়ে খেয়াঘাট ইজারা নিয়ে টাকা তোলার বিষয়ে চরম সংশয়ের মধ্যে পরেছেন ইজারাদার। প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ বিষয়টির দ্রুত সমাধান চাচ্ছেন ইজারাদার রিয়াজ মাতুব্বর হিরা।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেলতলা খেয়াঘাট থেকে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার লোক যাতায়াত করে থাকেন। জুলাই আন্দোলনের পর কোনো ইজারাদার না থাকায় জেলা পরিষদের লোকজন খেয়াঘাটের ভাড়া উত্তোলন করেন। সেসময় দুই পাড়ের লোকজনের কাছ থেকে নদী পারাপার হতে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো। 

দীর্ঘ কয়েক মাস জেলা পরিষদের লোকজন ভাড়া উত্তোলনের পর খেয়াঘাটটি ইজারা দেয়া হয়। ১ কোটি ৮ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়ে ঘাটটি ইজারা নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাকওয়া এন্টারপ্রাইজ। 

শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব খন্দকার বলেন, এই খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক যাতায়াত করেন। যার অধিকাংশই গরীব ও খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের কাছ থেকে ইজারাদারের লোকজন জোরপূর্বক আট টাকা করে ভাড়া উত্তোলনের চেষ্টা চালায়। 

তিনি আরও বলেন, খেয়াঘাটের ভাড়া জনপ্রতি পাঁচ টাকার উপরে কোনো ভাবেই নিতে দেয়া হবেনা। একই দাবি করেন ওই এলাকার হাজারো মানুষ। ইতোমধ্যে তারা অতিরিক্ত ভাড়া উত্তোলন বন্ধে মানববন্ধন করেছেন। প্রয়োজনে জেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও মানববন্ধন থেকে হুশিয়ারী দেওয়া হয়েছে। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাকওয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রিয়াজ মাতুব্বর হিরা বলেন, খেয়াঘাট ইজারা দেয়ার সময় পূর্বের সরকার নির্ধারিত ভাড়া চার টাকার পরিবর্তে নতুন করে আট টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা পরিষদ। এরপর থেকে ঘাটে আট টাকা ভাড়া চাইলেই জনগণের সাথে বাগবিতন্ডা বাঁধে। 

বর্তমানে লস দিয়ে দীর্ঘ তিন মাস ধরে পাঁচ টাকা করে ভাড়া উত্তোলন করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া চাইতে গেলেই জনগণের সাথে বাগবিতন্ডা শুরু হয়। এমনকি গত দুইদিন পূর্বে সরকার নির্ধারিত আট টাকা ভাড়া চাওয়ায় ঘাটের একজনকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, মারধরের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. জিয়াউল করিম একতরফা ভাবে বিচার করেছেন। পরে খেয়াঘাটের ভাড়ার বিষয়টি সমাধানের জন্য জেলা পরিষদ, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ সব দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ইজারার অর্ধেক টাকাও উত্তোলন করা সম্ভব হবেনা।

চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. জিয়াউল করিম এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। 

বরিশাল জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, খেয়াঘাটের ভাড়া বিভাগীয় কমিশনার ও মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। এখন ভাড়া বাড়ানো অথবা কমানোর কোনো সুযোগ নেই। ঠিকাদারের লোকজন সরকার নির্ধারিত ভাড়াই উঠাবে। সেক্ষেত্রে ঠিকাদার যদি ভাড়া উঠাতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা তার পাশে আছি।

তিনি আরও বলেন, ঘাটে ভাড়া উত্তোলন নিয়ে মারামারির খবর শুনেছি। ভাড়া উত্তোলন নিয়ে পরবর্তীতে আর যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য কোতয়ালী মডেল থানা ও কাউনিয়া থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

রাজু

×