ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

রাতে ঘুমের সময় জানালা খোলা রাখা হতে পারে মারাত্মক বিপজ্জনক, বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন 

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ২৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৮:৪০, ২৭ জুন ২০২৫

রাতে ঘুমের সময় জানালা খোলা রাখা হতে পারে মারাত্মক বিপজ্জনক, বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন 

ছবি: সংগৃহীত।

আমাদের অনেকেরই অভ্যাস, ঘুমানোর সময় ঘরের জানালা খুলে রাখা। অনেকেই মনে করেন, হালকা ঠান্ডা বাতাস ঘুমে সাহায্য করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভ্যাস রাতের নিঃশব্দ কিছু ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে, বিশেষ করে শহরের পরিবেশে।

বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় উঠে এসেছে, রাতের শব্দদূষণ, চাপ এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে গভীর সম্পর্ক। ফলে প্রশ্ন উঠছে—রাতের বেলা জানালা খোলা রাখা কি আদৌ নিরাপদ?

রাতের শব্দ ও ঘুমের উপর এর প্রভাব

জার্মানির জোহানেস গুটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাতের বেলার পরিবেশগত শব্দ শরীরে কর্টিসলসহ বিভিন্ন স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এমনকি এমন শব্দও, যা আপনাকে সম্পূর্ণ জাগিয়ে না তুললেও, হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বাড়ায়।

এভাবে নীরব স্ট্রেস প্রতিনিয়ত চলতে থাকলে তা উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

শহরাঞ্চলের মানুষ জানেন, কীভাবে রাতের বেলা গাড়ির হর্ন, মোটরসাইকেলের শব্দ বা রাস্তার কথোপকথন ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। জানালা খোলা থাকলে এসব শব্দ আরও সরাসরি ঘরে প্রবেশ করে, ফলে ঘুমের মান নষ্ট হয়।

একজন নগরবাসী লিখেছেন, “আগে ভাবতাম জানালা খুলে ঘুমালে ঠান্ডা হাওয়া শান্তি দেবে। কিন্তু সকালে ঘুম ভাঙার পর মাথা ভার হয়ে থাকত। বুঝতাম না, আমার শরীরের মধ্যে চলছিল এক নিঃশব্দ স্ট্রেস রেসপন্স।”

শব্দ নিয়ে আমাদের অতিসংবেদনশীলতা—কারণ বিবর্তনে লুকিয়ে

ঘুমের সময় শব্দে আমাদের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে প্রাচীন মানবজাতির টিকে থাকার প্রবৃত্তি। রাতের আঁধারে সম্ভাব্য বিপদ শনাক্তে শ্রবণ ইন্দ্রিয় ছিল প্রধান অস্ত্র। তাই ঘুমের মাঝেও আমাদের মস্তিষ্ক সচেতন থাকে, বিশেষত শব্দের প্রতি।

Noise & Health জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ঘুমের সময় পরিবেশগত শব্দ হৃদরোগ ও রক্তনালিজনিত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। শহরে এই শব্দদূষণ রাতেও থামে না, বরং অনেক সময় বেড়ে যায়।

একটি গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়া বা রাস্তায় লোকজনের হাসাহাসির মতো সামান্য শব্দও ঘুমের চক্র ব্যাহত করতে পারে। আপনি জেগে না উঠলেও, আপনার শরীর অভ্যন্তরীণভাবে সাড়া দেয়।

তাজা বাতাস ও শান্ত ঘুম—কীভাবে ভারসাম্য বজায় রাখবেন

যদি আপনি ঘরে তাজা বাতাস পেতে চান, তবে সময় বেছে নেওয়াই উত্তম। সকাল বা ঘুমানোর আগের কিছু সময় জানালা খুলে রাখুন, এরপর তা বন্ধ করে ঘুমান। চাইলে ঘরে একটি শান্ত ফ্যান বা এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন—যা ঘরের বাতাসকে সতেজ রাখবে, আবার বাইরের শব্দ ঢুকতেও দেবে না।

লেখকের অভিজ্ঞতায়, এই রুটিন অনুসরণ করে ঘুমের মান অনেক উন্নত হয়েছে। সকালে ঘুম ভাঙার পর মন-মাথা থাকে পরিষ্কার, বিরক্তিকর শব্দে ঘুম ভাঙে না।

সায়মা ইসলাম

×