
কলম্বোতে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে রীতিমত অসহায় বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের দাপটে দিশাহারা টাইগাররা। ম্যাচ এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, যেখানে নাজমুল হোসেন শান্তর দল ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কায় রয়েছে। একমাত্র টানা বৃষ্টি ছাড়া এই ম্যাচ বাঁচানোর কোনো উপায় নেই বাংলাদেশের কাছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৫ রান তুলতে ৬ উইকেট হারিয়েছে সফরকারীরা। এখনো ৯৬ রানে এগিয়ে লঙ্কানরা।
২১১ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুটা দারুণ করে। যেখানে নিজের প্রথম ১১ বলে ১৭ রান করে ফেলেন এনামুল হক বিজয়। কিন্তু ঝড়ো ব্যাটিং করতে করতে ইনিংসের সপ্তম ওভারের পঞ্চম বলে আসিথা ফার্নান্দোর শর্ট বলে পুল করতে যান বিজয়। আকাশে দীর্ঘক্ষণ ভেসে থাকা বল শর্ট লেগে সহজে ধরেছেন লঙ্কান বদলি ফিল্ডার পবন রতœায়েকে। ১৯ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় বিজয় ১৯ রান করে ফেরেন তিনি।
উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পরই দেওয়া হয় চা পানের বিরতি। দিনের শেষ সেশনের খেলা শুরু হলে ব্যাটিংয়ে নামেন মুমিনুল হক। তিনি নামতে না নামতেই অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে সাদমান ইসলামকে ফেরান প্রবাথ জয়সুরিয়া। যাবার আগে ১২ রান করেন তিনি। দুই ওপেনার বিজয় ও সাদমানকে হারালে বাংলাদেশের স্কোর হয়ে যায় ৭.২ ওভারে ২ উইকেটে ৩১ রান। প্রথম ইনিংসে ৭৮ ওভারে ২ উইকেটে ২৯০ রানে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে শ্রীলঙ্কা। দিনের প্রথম সেশনে লঙ্কানরা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও রানের চাকা সচল রেখেছে। ১০৩ ওভারে ৬ উইকেটে ৪০১ রানে দিনের প্রথম সেশনের খেলা শেষ করে স্বাগতিকরা। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগে লঙ্কানরা যে ৪ উইকেট হারিয়েছে, তার মধ্যে দুটি নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। নাহিদ রানা ও নাঈম হাসান পেয়েছেন একটি করে উইকেট। শেষ বিকেলে লঙ্কানরা খেলতে পেরেছে ৮৩ বল। ১১৬.৫ ওভারে ৪৫৮ রানে গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ইনিংস সর্বোচ্চ ১৫৮ রান করেছেন পাথুম নিশাঙ্কা।
নিশাঙ্কার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৩ রান করেন দিনেশ চান্দিমাল। কুশল মেন্ডিস ৮৭ বলে ৮৪ রান করেছেন। বাংলাদেশের তাইজুল ইসলাম ৪২.৫ ওভারে ১৩১ রান খরচ করে শিকার করেছেন ৫ উইকেট। নাঈম হাসান নিয়েছেন ৩ উইকেট। নাহিদ রানা পেয়েছেন এক উইকেট।
তবে বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কায় থাকলেও ৫ উইকেট নিয়ে একাধিক কীর্তি গড়েছেন তাইজুল ইসলাম। তিনি আউট করেছেন দুই লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও লাহিরু“উদারা, অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, থারিন্দু রত্নায়েকে ও আসিতা ফার্নান্ডোকে। ২০১৮ সাল থেকে টেস্টে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশিবার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। তাইজুলের সমান ১৪ বার ৫ উইকেট নিয়েছেন সময়ের সেরা বোলার জাসপ্রীত বুমরা। তাইজুল পেছনে ফেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে। শীর্ষে পাঁচে আছেন নাথান লায়ন ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অস্ট্রেলিয়ার অফ স্পিনার লায়ন ১২ বার ও ভারতের সাবেক অফ স্পিনার অশ্বিন ১১ বার নিয়েছেন ৫ উইকেট।
শীর্ষ পাঁচে থাকা বোলারদের মধ্যে তাইজুলই সবচেয়ে কম ইনিংস বোলিং করেছেন। ১৪ বার ৫ উইকেট নিতে বুমরা ৮৮ ম্যাচ খেলেছেন। তার থেকে ১৯ ইনিংস কম খেলেছেন তাইজুল (৬৯)। এই তালিকায় ৭ নম্বরে আছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। তিনি ৫ উইকেট নিয়েছেন ১০ বার।
তাইজুল এ নিয়ে দেশের বাইরে ৫ উইকেট নিলেন পাঁচবার। এটিও বাংলাদেশের হয়ে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। তার সমান পাঁচবার বিদেশে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। সাকিব অবশ্য তার চেয়ে আট ইনিংস বেশি বোলিং করেছেন। সাকিব বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৯ বার টেস্টের এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন। তাইজুল নিয়েছেন ১৭ বার। বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট নেওয়ার তালিকায় তাইজুল এখন চতুর্থ। আর তিনবার ৫ উইকেট পেলে সাকিবকে ছাড়িয়ে তিনি বসবেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরির পাশে (২০)। বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে টেস্টে সর্বোচ্চ ৩৬ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছে রঙ্গনা হেরাথ। খুব দ্রুত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট শিকারিও হতে পারেন তাইজুল। তার উইকেট এখন ২৩৭টি। সাকিবের চেয়ে মাত্র ৯টি দূরে।
তাইজুল সাকিবকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন নভেম্বরে ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ড সিরিজেই। মজার ব্যাপার হলো, ভেট্টোরি ও হেরাথ দুজনকেই বাংলাদেশ দলে স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে পেয়েছেন তাইজুল। বাঁহাতি এই বোলারের ব্যক্তিগত দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েছেন। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে শীঘ্রই দীর্ঘদিন ধরে বিশ^সেরা অলরাউন্ডারের জায়গা দখল করে রাখা সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে যাবেন তিনি।
প্যানেল