ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বিশৃঙ্খলার দায় পুলিশের নাকি সরকারের?, যা বললেন রাজেকুজ্জামান রতন

প্রকাশিত: ০২:৩৭, ২৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ০২:৩৮, ২৮ জুন ২০২৫

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বিশৃঙ্খলার দায় পুলিশের নাকি সরকারের?, যা বললেন রাজেকুজ্জামান রতন

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে দলগত বিশৃঙ্খলা, আন্দোলন ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন। তিনি বলেন, গেল ১০ মাসে দেশে যে সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে, তা ছিল জনগণের ক্ষোভ ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া। পুলিশ, যার দায়িত্ব হওয়া উচিত ছিল প্রজাতন্ত্রের নিরপেক্ষ বাহিনী হিসেবে কাজ করা, তা হয়ে উঠেছে দলীয় সরকারের হাতিয়ার। 

তিনি বলেন, “আন্দোলন সবসময় গড়ে ওঠে জনদাবির ভিত্তিতে। গণতান্ত্রিক সরকার হলে আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করে। আর অগণতান্ত্রিক সরকার দমন-পীড়নের পথে হাঁটে। এই দমন-পীড়নের প্রধান হাতিয়ার তিনটি—পুলিশ, বিচার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা। জনগণের মুখোমুখি প্রথমে যেহেতু পুলিশ, তাই তাদের ওপরই ক্ষোভ গিয়ে পড়ে।”

রতন অভিযোগ করেন, পুলিশের হাতে আইনি সুরক্ষা থাকায় তারা অনেক সময় আইনকে অপব্যবহার করে, আবার কখনো আইনকে তোয়াক্কাই করে না। “রিমান্ডে নিয়ে পেটানো, পুলিশের গুলি—এসব কোনো আইনে পড়ে না। আবার কেউ পুলিশের দিকে ইট ছুঁড়লে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৯, ৯০-এর গণঅভ্যুত্থান—সব সময় গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এবারের পরিস্থিতি অন্য রকম। প্রায় ৫০০ থানায় হামলা হয়েছে, পুলিশ সদস্যরা নির্যাতিত হয়েছেন, কেউ কেউ প্রাণও হারিয়েছেন।”

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটা শুধুই আক্রমণ নয়, এটা ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ। যখন দীর্ঘদিন ধরে দমন-পীড়নের শিকার হয় জনগণ, তখন সেই পুলিশকে লক্ষ্য করেই প্রতিশোধমূলক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।”

তিনি বলেন, “পুলিশ ও প্রশাসন নিরপেক্ষ হলে হয়তো এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। কিন্তু দলীয় নিয়ন্ত্রণের কারণে জনগণের ক্ষোভ ওই বাহিনীর ওপরেই গিয়ে পড়ে।”

১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তখন পুলিশ এতটা আগ্রাসী বা দলীয় ছিল না। ছিল রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ। ছাত্রদের সর্বদলীয় ঐক্য ছিল, ফলে আন্দোলন শৃঙ্খলার মধ্যেই থাকতো। কিন্তু গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে আজকের এই উশৃঙ্খল পরিস্থিতি।”

রাজেকুজ্জামান রতনের মতে, “বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো নির্দেশনা পাচ্ছে না। আবার সরকারের জবাবদিহিতা না থাকায় পরিস্থিতি হয়ে পড়েছে আরও ভয়াবহ।”

রিফাত

আরো পড়ুন  

×