ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

দুই কোটি মানুষের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র হবে

চালু হতে যাচ্ছে বিশ্বমানের ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিট

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ২৭ জুন ২০২৫

চালু হতে যাচ্ছে বিশ্বমানের ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিট

.

অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের আট জেলার মানুষজনের মাঝে  স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে বড় ধরনের আশার আলো দেখা দিয়েছে। এবার  চালু হতে যাচ্ছে  বিশ্বমানের ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিট। আগামী বছরের (২০২৬) ডিসেম্বরে বিভাগীয় শহর রংপুরের মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে এই সেবা চালু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এজন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ১৭ তলাবিশিষ্ট ভবন। ভবনের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৪৬০ শয্যাবিশিষ্ট বিশ্বমানের আধুনিক ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ বিভাগের নির্মাণকাজ দ্রুত এগোচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৭ তলা ভবনের ছাদ ঢালাই শেষ হয়েছে। এই অঞ্চলের দুই কোটি মানুষের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র হবে এটি। এতে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সুবিধা প্রাপ্তিতে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে এই জনপদের মানুষ।
জানা যায়  রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মাঠ সংলগ্ন এলাকায় চলমান নির্মাণকাজে ভবনটি যথাসময়ে যাতে সম্পন্ন হয় এ জন্য গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান, রংপুরের গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সাকিউল আলম নিয়মিত মনিটরিং করছেন। আগামী বছর ডিসেম্বর মাসে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ভবনে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যাবে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ক্যা¤পাসে এক একর ৩৭ শতক জমির ওপর অত্যাধুনিক এই ইউনিটের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। স্থাপত্য অধিদপ্তরের নকশার আলোকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এটি বাস্তবায়ন করছে। দুটি বুনিয়াদি ভিত্তি (ভবনের ভূগর্ভস্থ অংশ) এবং ১৭ তলা ভবনবিশিষ্ট এই ইউনিটে ক্যান্সারের জন্য ১৮০টি, কিডনির জন্য ১৬৫ এবং হৃদরোগের জন্য ১১৫টি শয্যা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান,অনুমেদিত প্রকল্পটির প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ৯২ কোটি ৭৩ লাখ ৪৯ হাজার ৫৩৬ টাকা। ঢাকার বঙ্গ বিল্ডার্স লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৮৩ কোটি ৪৬ লাখ ১৪ হাজার ৫৮২ টাকা ব্যয়ে এর নির্মাণকাজ চলছে। এই প্রকল্পটি ২৪ মাস সময়সীমা নির্ধারণ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের ৩০ মে। নির্মাণাধীন জমিতে পানির স্তর উচ্চ হওয়ায় ৪০ ফিট মাটি কেটে কাজটি করাসহ মাঝে বৈশ্বিক করোনা অতিমারীর কারণে প্রকল্পের কাজ অনেকটা বিলম্বিত হয়। প্রায় ২ বছর পর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ফের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর আগে ২০২২ সালে ৯ জানুয়ারি এই সমন্বিত ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিটটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রথমে এটি ১০০ শয্যার অনুমোদিত হলেও পরবর্তিতে ৪৬০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এদিকে রংপুর বিভাগের আট জেলার সমস্ত মানুষের একমাত্র উন্নত চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। অথচ সেখানে প্রায়ই নেফ্রোলজি বিভাগে কিডনি ডায়ালাইসিসে যন্ত্র ত্রুটির কারণে ভুগতে হয় রোগীদের। সরকারি হাসপাতাল হলেও বেশি রোগী সেখানে ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পায় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালটির হৃদরোগ বিভাগেও রয়েছে চিকিৎসক সংকটসহ নানা অব্যবস্থাপনা। একাধিক দর্শনার্থী প্রবেশ ও অবস্থান করা নিষেধ থাকলেও রোগীর স্বজনরা এই নিয়ম না মানায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সদের। অথচ অত্যন্ত মুমূর্ষু অবস্থায় এ বিভাগের প্রতিটি রোগীকে ভর্তি করানো হয়। একদিকে নির্ধারিত বেডের চাইতে রোগীর সংখ্যা বেশি, অপরদিকে চিকিৎসক সংকটের জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকসহ সেবিকাগণও সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ ছাড়া রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা। দরিদ্র আর নিম্নবিত্ত রোগীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। এ পরিস্থিতিতে নির্মাণাধীন ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিটটি ঘিরে আশার আলো দেখছেন এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান এ ব্যাপারে বলেছেন, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট। কিন্তু এখানে সব সময় আড়াই হাজার রোগী স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকে। হাসপাতালের আধুনিক বহুতল ভবনে ৩টি বিভাগ চালু হলে মূল ভবনে অনেক জায়গা তৈরি হবে। এতে অনেক রোগী সেবা নিতে পারবে। তিনি আরও বলেন, নতুন এ ভবনটি আগামী বছর ডিসেম্বরে হন্তান্তর করা হবে। ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ বিভাগের জনবল, সরঞ্জমাদি ও মেশিনপত্র সরবরাহের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

প্যানেল

×