
ছবিঃ সংগৃহীত
শরীরের মতো মস্তিষ্ককেও প্রয়োজন হয় নিয়মিত ব্যায়ামের। এতে যেমন মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগও উন্নত হয়।
এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন CARE Hospitals, মালাকপেট-এর নিউরোলজি পরামর্শক ডা. মুরালি কৃষ্ণা। তিনি জানান, নিউরোপ্লাস্টিসিটি বা মস্তিষ্কের নিজেকে নতুনভাবে গঠনের ক্ষমতা নিয়মিত মানসিক ব্যায়ামে বৃদ্ধি পায়, যার ফলে মস্তিষ্ক আরও দ্রুত শেখে, মনে রাখে এবং পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।
কেন মস্তিষ্কের ব্যায়াম জরুরি?
নিউরোপ্লাস্টিসিটি সক্রিয় করে – মস্তিষ্ক নিজেকে পুনঃগঠনের মাধ্যমে নতুন সংযোগ তৈরি করে, যা শেখার ক্ষমতা, স্মৃতি এবং অভিযোজনশক্তি বাড়ায়।
বয়সজনিত মস্তিষ্কের দুর্বলতা প্রতিরোধ করে – নিয়মিত মেন্টাল এক্সারসাইজ বার্ধক্যের কারণে স্বাভাবিক স্নায়ু ক্ষয় রোধে সাহায্য করে। এটি অ্যালঝেইমারস ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকিও কমায়।
মনোযোগ বাড়ায় – মনোসংযোগ ও কাজের প্রতি একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে মানসিক অনুশীলন।
স্মৃতি শক্তি উন্নত করে – শরীরচর্চার মতো মানসিক ব্যায়ামও নিউরাল পথগুলোকে শক্তিশালী করে, ফলে তথ্য মনে রাখা ও পুনরায় স্মরণ করা সহজ হয়।
মনোযোগ ও স্মৃতি উন্নত করতে নিউরোলজিস্টের ৩ মস্তিষ্কের ব্যায়াম
১. মেডিটেশন ও মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন
কীভাবে কাজ করে: মনকে বর্তমান মুহূর্তে কেন্দ্রীভূত করে চিন্তা, অনুভূতি ও শারীরিক অনুভূতি সম্পর্কে সচেতন হওয়াই মাইন্ডফুলনেসের মূল ভিত্তি।
উপকারিতা: নিয়মিত মেডিটেশন মনোযোগ বাড়ায়, মানসিক চাপ কমায় এবং স্মৃতি উন্নত করে। এটি মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স ও হিপোক্যাম্পাস অঞ্চলের ঘনত্ব বাড়ায়।
উদাহরণ অনুশীলন: প্রতিদিন ১০–২০ মিনিট একটি নিরিবিলি স্থানে বসে নিঃশ্বাসের প্রতি মনোযোগ দিন বা একটি নির্দিষ্ট মন্ত্র জপ করুন। মন অন্যদিকে চলে গেলে ধীরে ধীরে আবার ফিরিয়ে আনুন।
২. মেমোরি গেমস ও ধাঁধা সমাধান
কীভাবে কাজ করে: মস্তিষ্কের স্মৃতি ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়।
উপকারিতা: সুডোকু, ক্রসওয়ার্ড, মেমোরি কার্ড গেমস ইত্যাদি শর্ট-টার্ম মেমোরি ও কগনিটিভ ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়াতে সহায়ক।
উদাহরণ অনুশীলন: প্রতিদিন একটি সুডোকু বা ক্রসওয়ার্ড সমাধান করুন, কিংবা মেমোরি ম্যাচিং গেম খেলুন।
৩. নতুন কিছু শেখা বা ভাষা রপ্ত করা
কীভাবে কাজ করে: নতুন বিষয় শেখার জন্য মস্তিষ্ক নতুন তথ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়া করে, ফলে নতুন নিউরাল সংযোগ গড়ে ওঠে।
উপকারিতা: নতুন দক্ষতা অর্জনে মস্তিষ্কের মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি উভয়ই বৃদ্ধি পায়।
উদাহরণ অনুশীলন: Duolingo-র মতো অ্যাপে নতুন ভাষা শেখা শুরু করুন, কোনো বাদ্যযন্ত্র শেখার চেষ্টা করুন, কিংবা অনলাইনে পছন্দসই কোর্সে ভর্তি হন।
উপসংহার
মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে শুধু বই পড়া বা পাজল নয়, প্রয়োজন সচেতন ও পরিকল্পিত মানসিক চর্চা। ডা. কৃষ্ণা’র মতে, দৈনন্দিন জীবনে এই সহজ ৩টি মস্তিষ্কের ব্যায়ামকে অন্তর্ভুক্ত করলেই মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়বে বহুগুণে।
স্মার্ট হতে চাইলে শুধু প্রযুক্তি নয়, নিজের মস্তিষ্ককেও রাখতে হবে ফিট!
ইমরান