
ছবি: সংগৃহীত
যে দক্ষতাগুলোকে জীবন রক্ষাকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয় সাঁতার তাদের মধ্যে অন্যতম । অথচ অজ্ঞতাবশত, আমরা শিক্ষা সহ বিভিন্ন দক্ষতার উপর গুরুত্ব দিলেও সাঁতার শেখার প্রতি গুরুত্ব দেওয়াটাকে বিবেচনায় নিই না, যার ফলে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাঁতার না জানা মানুষ, বিশেষত, শিশুরা পানিতে ডুবে মারা যায়।
উন্নত বিশ্বে শিশুকে সাঁতার শেখানো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মতোই গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়। পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সেই সেখানে সাঁতার শেখানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে অতি ছোট শিশুকেও ছয় থেকে আট মাস বয়সেই সাঁতার শেখানো হয়। সেখানে সাঁতার শেখানোর জন্য পারিবারিক উদ্যোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপরেও নির্ভর করা হয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনের তাগিদে বা পারিবারিক উদ্যোগে সাঁতার শেখানো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সাঁতার শেখার সুযোগ খুবই অপ্রতুল। সুযোগ থাকলেও সেই সুযোগ গ্রহণ করা অর্থ ও সুযোগ প্রাপ্যতার বিচারে প্রায় বিলাসিতার সমান।
একটি ঘটনা:
পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় বড়াল নদীতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২৭ জুন) দুপুরে পৌর শহরের থানা পাড়া মহল্লায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, ফরিদপুর পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক কাউন্সিলর আবু সামার মেয়ে তন্নী (১১) এবং ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের ছেলে জুবায়ের (৮)। সম্পর্কে এরা আপন চাচাতো ভাই-বোন।
জানা যায়, দুপুরে বাড়ি সংলগ্ন বড়াল নদীর ঘাটে খেলছিল তন্নী ও জুবায়ের। এ সময় হঠাৎ করে জুবায়ের নদীর পানিতে পড়ে গেলে তাকে বাঁচাতে চেষ্টা করে তন্নী। একপর্যায়ে দুজনেই নদীর গভীরে তলিয়ে যায়।
স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে দ্রুত শিশু দুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ফরিদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসনাত জামান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এই ধরনের সংবাদ প্রতিদিনের সংবাদপত্র খুললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। পানিতে ডুবে মৃত্যু যেন ডাল ভাতের মত সহজলভ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে!
ফরিদপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব হাসান তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে প্রচারিত একটি সরকারি পোস্টার শেয়ার করে লেখেন, "আজকে ডুবে যাওয়া শিশু দুটির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।"
তিনি আরও যোগ করেন, "সকল মা-বাবাকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার অনুরোধ রইলো। প্রত্যেকটি প্রাণই মূল্যবান।"
সত্যই সচেতনতার বিকল্প নেই, বিশেষ করে যেকোনো জলাধার যেমন- নদী, পুকুর, খাল বা বিল সংলগ্ন বাসিন্দাদের সাঁতার না জানা বাচ্চাদের প্রতি সার্বক্ষণিক নজরদারি করতে হবে যা পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে পারে।
আর বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশ যেখানে মৌলিক চাহিদাগুলো অনেক মানুষের জন্য বিলাসিতা, সেখানে সাঁতার শেখানোর সরকারি উদ্যোগ বিভিন্ন বিচারে বিলাসিতাই বটে। তবে সময়ের দাবি হওয়ায় এর বিকল্প আছে কি?
Mily