
১৯৭৮ সালে যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের হ্যাকনিতে বর্ণবাদী হামলার শিকার ইসহাক আলীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পূর্বলন্ডনের ভ্যালেন্স রোডের পিওর চা-ই সেমিনার রুমে একটি হৃদয়স্পর্শী স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
লন্ডনের আলতাব আলী ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি ইছহাক আলীর ৪৭তম মৃত্যু বার্ষিকীর ঠিক একদিন আগে অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন নূরউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ডক্টর আনসার আহমেদ উল্লাহর পরিচালনায়, এই সমাবেশে করা হয়।
এ সভায় জানানো হয় ইসহাক আলীর জীবন নিয়ে প্রতিফলন করার জন্য পরিবারের সদস্য, বর্ণবাদ বিরোধী এবং যুব সংগঠকদের একত্রিত করা হয়।
এ সভায় গবেষক ডক্টর আনসার আহমেদ উল্লাহ ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে আরো বলেন— ২৬ জুন ১৯৭৮ সালের ৪৫ বছর বয়সী ইসহাক আলী এবং ২০ বছরবয়সী ফারুক উদ্দিন পূর্ব লন্ডনের হ্যাকনির উরসউইক রোডে আলীর বাড়ির কাছে তিনজন শ্বেতাঙ্গ যুবক দ্বারা আক্রান্ত হন।
পূর্বের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, জানা গেছে- দুইজন ঘুষি মেরে এবং অন্যজন তাদের বুটের ফিতা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। সেদিন কুপারসেল রোডে বসবাসকারী পাঁচ সন্তানের জনক ইছহাক আলী মারাত্মক হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং হ্যাকনি হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তিনি মারা যান।
সেই সময়, ইসহাক আলীর চাচাতো ভাই, সফর উদ্দিন, হ্যাকনিগেজেটকে বলেছিলেন, “তার গায়ের রঙের কারণে তাকে আক্রমণ করা হয়েছিল। কোনও টাকা নেওয়া ওরা। এরকম ঘটনা ইস্ট এন্ডে এটি সর্বদা ঘটে।
” হ্যাকনি কর্মী অলোক বিশ্বাস, যিনি পরিবারকে চিনতেন, বলেছেন ফারুক উদ্দিন রিপোর্ট করেছেন যে আক্রমণকারীরা বর্ণবাদী গালিগালাজ করেছিল, দুই ব্যক্তিকে “পাকি” এবং “কালো”বলে অভিহিত করেছিল।
এ সভায় ইসহাক আলীর শ্যালক, জাহাঙ্গীর খান স্মৃতিচারণ করে বলেন —সিলেটের বিয়ানীবাজারের মোরিয়া ইউনিয়নের ফেন গ্রামে জন্মগ্রহণকারী ইসহাকআলী খুব বন্ধুত্বপূর্ণ, রসিক এবং অমায়িক ব্যক্তি ছিলেন ।
তিনি বলেন - লন্ডনের হলওয়ে রোডে একটি রেস্তোরাঁ এবং হ্যাকনিতে একটি কারখানার মালিক ছিলেন ইসহাক আলী ।
অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন- আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা আকিকুর রহমান, আলতাব আলী ট্রাস্টের রফিক উল্লাহ, বাংলাদেশ ইয়ুথ ফ্রন্টের (বিওয়াইএফ) জামাল মিয়া, জয়নাল চৌধুরী এবং আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশ ইয়ুথ মুভমেন্টের চুনুমিয়া, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট আব্দুল মালিক খোকন, অভিনেতা স্বাধীন খসরু, স্বাধীনতা ট্রাস্টের চেয়ারপারসন জুলি বেগম , বাংলাদেশ ইয়ুথলীগের সেলিম উল্লাহ, ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি অধ্যাপক সাজিদুর রহমান, ব্রিজবাংলা২৪ এর সম্পাদক – শাহ মুস্তাফিজুর রহমান বেলাল, ফাউন্ডেশনের সহকারী সম্পাদক জামাল খান, ইসহাক আলীর কনিষ্ঠ পুত্র শুহেল আহমেদ, তার পুত্রবধূ হাসিনা আহমেদ, প্রোগ্রেসিভ ইয়ুথ অর্গানিসশনের শুভা মতিন ও খালিক আহমেদ প্রমুখ ।
অনুষ্ঠানে হ্যাকনি ও টাওয়ার হ্যামলেটস ডিফেন্স কমিটির সদস্যদের- অলোক বিশ্বাস, ভজন চ্যাটার্জী এবং প্যাট্রিক কোডিকারা প্রতিও শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয় – যারা ইসহাক আলীর মৃত্যুর পর বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
বক্তারা ইসহাক আলীর এবং বৃহত্তর বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন সংরক্ষণের জন্য স্বাধীনতা ট্রাস্টের সহযোগিতায় একটি স্মারক পুস্তিকা তৈরির পক্ষে সমর্থন জানান এবং তার মৃত্যু বার্ষিকী এভাবে উদযাপনের প্রস্তাব করেন।
ইসহাক আলী তার মৃত্যুর নয় বছর আগে বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে এসেছিলেন। উল্লেখ্য যে ইসহাক আলীর হত্যার জন্যে তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে অভিযুক্ত করা হয়, কেন্টিশ টাউন রোডের ১৭ বছর বয়সী একজন ক্যাবিনেট মেকার এবং হোমারটনের ১৬বছর বয়সী দুই কিশোর। ১৯৭৯ সালে, তাদের প্রত্যেককে মাত্র ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, খুনের অভিযোগে নয় বরং ছিনতাইয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
হাফিজ মোঃ জিল্লু খানের নেতৃত্বে ইসহাক আলীর জন্য একটি বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে সভাটি শেষ হয়।
Jahan