ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

‎ হযরত শাহ সুফি আহমদ আলী জান শরীফ সুরেশ্বরী  (রহ:)

শরীয়তপুরের  আধ্যাত্মিক  বাতিঘর

মোঃ আমির হোসেন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, শরীয়তপুর 

প্রকাশিত: ১৫:৩৮, ২৭ জুন ২০২৫

শরীয়তপুরের  আধ্যাত্মিক  বাতিঘর

দরবারের সুরেশ্বর শব্দটি এসেছে সুর+ঈশ্বর = সুরেশ্বর নামক সন্ধি থেকে। দরবারের প্রতিষ্ঠাতা শাহ সুফি আহমদ আলী জান শরীফ সুরেশ্বরী গান বা গজল অত্যধিক পছন্দ করতেন, এবং তার গলার সুর ছিলো সুরেলা।

১৯০৭-১০ সালে শরীয়তপুর অঞ্চলে জিমির সি.এস জরিপ হয়, জরিপের সময় ইংরেজ অফিসার জে.সি.জেক এই অঞ্চল পরিদর্শনে আসেন। অফিসার সুফি আহমদ আলী বা জান শরীফের গানের গলা ও তার মাহাত্ন্য শুনে তার সন্মানে এই গ্রামের নামকরণ করেন সুরেশ্বর। এই জরিপে উক্ত অঞ্চলকে 'সুরেশ্বর' মৌজা জে. এল. নং ৪৪৯ নামকরণ করা হয়। তখন এটি ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমার পালং থানার অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

১৯১৯ সালে সুরেশ্বর দরবারের প্রতিষ্ঠাতা জান শরীফ ইন্তেকাল করেন ও তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সূফী সৈয়্যদ নূরী শাহ্ সুরেশ্বর দরবারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ সূফী সৈয়্যেদ নূরী শাহ্ ১৯৫৪ সালে মৃত্যু বরণ করেন এবং পরে তার দ্বিতীয় পুত্র সৈয়দ জালাল নুরী ও তৃতীয় পুত্র তাজাম্মুল নুরী সুরেশ্বর দরবার পরিচালনা করেন। দীর্ঘ ৪৪ বছর জালাল নুরী সুরেশ্বর দরবারের পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ৷ বর্তমানে জালাল নুরী ও তাজাম্মুল নুরীর সন্তানগণ সুরেশ্বর দরবার এর পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন ।

দরবারের আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফ বৃহত্তর ফরিদপুরের বর্তমান শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার সুরেশ্বর গ্রামে অবস্থিত। বর্তমান পদ্মা নদী সুরেশ্বর দরবার শরীফ সংলগ্ন অবস্থিত হলেও পূর্বে পদ্মা তীর হতে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ছিল। আরও পূর্বে সুরেশ্বর ঢাকা জেলার বিক্রমপুর অঞ্চলের খলিলাবাদ পরগনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখন বিক্রমপুর নামেই সমধিক পরিচিত ছিল। পদ্মা নদী বিক্রমপুরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উত্তর বিক্রমপুর ও দক্ষিণ বিক্রমপুর দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ১৮৬৯ সালে পদ্মার গতি পরিবর্তিত হলে, বিক্রমপুরের দক্ষিণ অংশ ঢাকা জেলা হতে পৃথক হয়ে যায়। মূলকথা দরবারটি পূর্বে ঢাকা জেলার অন্তর্গত থাকলেও এটি বর্তমানে শরীয়তপুর জেলায় রয়েছে।
সুরেশ্বর দরবারে প্রতিবছর ০২ থেকে ০৪ ফেব্রুয়ারিতে বার্ষিক প্রধান ওরছ শরীফ পালিত হয়। ১৮ নভেম্বরে সুরেশ্বর দরবারের প্রতিষ্ঠাতার জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী পালন হয়ে থাকে। প্রতিবছর ২৯ মে দরবারের দরবেশী সম্মেলন নামে এক বার্ষিক সুফি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ দরবারের অনুসারীরা পবিত্র শবে বরাত, পবিত্র রমজান মাস, শবে কদর, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা ইত্যাদি ধর্মীয় দিবসগুলো স্থানীয় ভাবে চাঁদ দেখার পরিবর্তে বিশ্বে প্রথম চাঁদ বা আরব দেশগুলোতে চাঁদ দেখার ভিত্তিতে পালন করে থাকেন।

Jahan

×