
শেরপুরের গর্ব, ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েশ ভৌগোলিক নির্দেশক (জি.আই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে পণ্যটি আনুষ্ঠানিকভাবে জি.আই তালিকাভুক্ত হয়। দেশের মিষ্টান্ন শিল্পে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ এই পায়েশ কেবল স্বাদের জন্যই নয়, বরং শত বছরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং দক্ষতার পরিচায়ক হিসেবেও গৃহীত।
প্রায় একশ বছর আগে শেরপুর সদর উপজেলার গৃদেরগাঁও, চকপাড়া ও ঝিনাইগাতির কিছু পরিবারে ছানার পায়েশ তৈরির প্রচলন শুরু হয়। সাধারণ দুধ, চিনি ও লেবুর রস দিয়ে তৈরি ছানাকে ফুটিয়ে বিশেষ উপায়ে রান্না করা হয় এই পায়েশ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রস্তুত প্রণালীতে সংযোজিত হয়েছে বিশেষত্ব, যা এখন শেরপুরের নিজস্ব স্বাদ ও পরিচয় গড়ে তুলেছে।
বর্তমানে জেলার সদর বাজার, কসবা বাজার, ঝিনাইগাতি ও নকলা উপজেলায় পায়েশ তৈরির শতাধিক কারিগর ও দোকান রয়েছে। বিশেষ করে শেরপুর সদরের ভাওয়াল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, রাজমহল সুইটস ও রসমঞ্জরি ইত্যাদি দোকানে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ কেজি ছানার পায়েশ বিক্রি হয়। ঈদ, পূজা, বিয়ে, জন্মদিন কিংবা ব্যবসায়িক উপহার হিসেবে এই পায়েশ দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে দেশের অন্যান্য জেলাতেও।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন, আমার বাবা-চাচারা এই পায়েশ বানাতেন। এখন আমরা দ্বিতীয়-তৃতীয় প্রজন্ম ধরে তা চালিয়ে যাচ্ছি। জি.আই স্বীকৃতি আমাদের গর্ব বাড়িয়েছে, এখন আমরা আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানির চিন্তা করছি।
জেলা প্রশাসন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এই জি.আই আবেদন সফল হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই স্বীকৃতি পণ্যের মান, বাজারমূল্য ও জনপ্রিয়তা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে এখন প্যাকেজিং, ব্র্যান্ডিং ও রপ্তানির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
জি.আই ট্যাগ পাওয়ার ফলে শেরপুরের ছানার পায়েশ এখন কেবল একটি মিষ্টান্ন নয়, বরং একটি নিবন্ধিত ঐতিহ্য, যা জেলার অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এখন সময় এসেছে এই ঐতিহ্যকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার।
মুমু ২