
ছবি: সংগৃহীত
সিজোফ্রেনিয়া হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা ব্যক্তির আচরণ, চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। এই রোগের লক্ষণ ধীরে ধীরে বিকশিত হয় এবং সাধারণত কৈশোরের শেষ থেকে তরুণ বয়স্ক বয়সের প্রথম দিকে প্রকাশ পায়।
সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণগুলো প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:
১. পজিটিভ লক্ষণ:
বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত বোধ বা অনুভূতি যেমন — হ্যালুসিনেশন (অস্তিত্বহীন কিছু দেখা, শোনা বা অনুভব করা) এবং ডেলিউশন (অবাস্তব, ভ্রান্ত বিশ্বাস)।
২. নেগেটিভ লক্ষণ:
উদাসীনতা, অনুপ্রেরণার অভাব, সামাজিক সংযোগের অভাব ইত্যাদি।
৩. জ্ঞানের সমস্যা:
মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও একাগ্রতায় বিঘ্ন।
সিজোফ্রেনিয়ার প্রধান লক্ষণসমূহ
-
হ্যালুসিনেশন:
যে ব্যক্তি স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত, সে পরিচিত বা অজানা কণ্ঠ শুনতে পারে; বা এমন শব্দ, গন্ধ বা অনুভূতি পেতে পারে যা প্রকৃতপক্ষে নেই। -
ডিলিউশন:
অবাস্তব বিশ্বাস যা অন্যদের কাছে অযৌক্তিক মনে হয়। যেমন টিভি বা রেডিও থেকে গোপন বার্তা পাওয়ার বিশ্বাস, কারো ষড়যন্ত্র করছে ভাবা বা নিজেকে অতিমাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভাবা। -
বিশৃঙ্খল চিন্তা:
কথার ও চিন্তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন হওয়া, অপ্রাসঙ্গিক শব্দগুচ্ছ বলা, কথাবার্তা মাঝেমধ্যে হঠাৎ থেমে যাওয়া। -
মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তির সমস্যা:
কথোপকথনে মনোযোগ রাখতে বা নতুন কিছু শিখতে সমস্যা হওয়া। -
অতিরিক্ত উত্তেজনা:
হঠাৎ করেই অতিরিক্ত কথা বলা, চলাফেরা বা অনিদ্রার মতো লক্ষণ দেখা দেয়া। -
গর্বপরতা (ডিলিউশন অব গ্র্যান্ডিওসিটি):
নিজেকে অন্যদের চেয়ে বিশেষ বা মহৎ ভাবা, বা নিজের সম্পর্কে অতিরঞ্জিত ধারণা রাখা। -
আবেগের বোধহীনতা:
মানসিকভাবে দূরে সরে যাওয়া, সামাজিক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। -
বিমূর্ত চিন্তায় অসুবিধা:
রূপক বা বিমূর্ত ভাব বুঝতে না পারা, সবকিছু সরল এবং বাস্তব দৃষ্টিতে দেখা। -
অস্থির বা ক্যাটেটোনিক আচরণ:
অপ্রয়োজনীয় হাসি-ঠাট্টা, নিজের সাথে কথা বলা, হঠাৎ থেমে থাকা বা অচল হয়ে যাওয়া। -
আবেগ প্রকাশে অনিহা:
অনুভূতি প্রকাশে স্বাভাবিক অভাব, মুখাকৃতি বা কণ্ঠস্বর ফ্ল্যাট বা নিরুত্তেজিত হওয়া।
অন্যান্য লক্ষণসমূহ
-
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা (Asociality)
-
সুখানুভূতির অভাব (Anhedonia)
-
মিশ্র মানসিক অবস্থা, যেমন বিষণ্নতা
-
আত্মহত্যার প্রবণতা বা চিকিৎসা অগ্রাহ্য করা
এই সমস্যাগুলো সময়মতো শনাক্ত করে চিকিৎসা ও সহায়তা নিলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
প্রাথমিক লক্ষণ ও প্রতিক্রিয়া
সিজোফ্রেনিয়ার প্রথম লক্ষণ সাধারণত ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে দেখা দেয়। এসব লক্ষণ হলো:
-
বেশি সময় একা থাকা
-
হঠাৎ মনোযোগের অভাব
-
সন্দেহবোধ বা প্যারানয়েড ভাবনা
-
পড়াশোনা বা কর্মদক্ষতার দ্রুত অবনতি
-
কথা বলায় অসুবিধা বা যোগাযোগে সমস্যা
-
বাস্তবতা ও কল্পনার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পারা
যদি নিজের বা কাছের কারো মধ্যে এসব লক্ষণ লক্ষ্য করেন, তাহলে দ্রুত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করা জরুরি। সঠিক নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে সিজোফ্রেনিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
সময়সূচিত চিকিৎসা ও পরিপূর্ণ সহায়তা পেলে রোগীর জীবনযাত্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়।
আবির