সুহা একটি ছোট্ট মেয়ে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। চোখ দুটো বড় বড়, কল্পনায় ভরপুর। তবে একটা কথা, সুহার বাবা আর এই পৃথিবীতে নেই। পাঁচ বছর বয়সে এক দুর্ঘটনায় বাবাকে হারিয়েছে সে। যতটুকু মনে আছে- বাবা তাকে কোলে নিয়ে গলা জড়িয়ে ধরতেন, কপালে চুমু দিতেন আর বলতেন, ‘তুমি আমার আকাশের তারা!’
বাবার চলে যাওয়ার পরও সুহার সেই ভালোবাসার অনুভূতিটা রয়ে গেছে। মা প্রতিদিন তাকে স্কুলে দিয়ে যান। কিন্তু স্কুল ছুটির পর যখন সবাই বাবার হাত ধরে বেরিয়ে আসে- কেউ আইসক্রিম খায়, কেউ বাদাম, কেউবা বাবার কোলে উঠে ঝুলতে ঝুলতে রিকশায় ওঠে- তখন সুহার মনটায় কষ্টের হাওয়া বয়ে যায়। মনটা বিষণ্ন হয়ে ওঠে।
সে একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ। আর মনে মনে বলে, ‘বাবা, যদি তুমি থাকতে... আমি তোমার সঙ্গে রিক্সায় চড়তাম। তুমি আমার জন্য বাদাম কিনে দিতে... আর আমি তোমার কানে ফিসফিস করে গল্প বলতাম।’
তারপর নিজের খালি হাতে বাবার হাত কল্পনা করে, সেই অদৃশ্য হাত ধরেই বাড়ি ফেরে।
একদিন স্কুলে ঘোষণা এলো- আগামী রবিবার বাবা দিবস উদযাপন হবে। সবাইকে বলা হলো, বাবার জন্য একটি কার্ড বানিয়ে আনতে।
সুহা বাড়ি ফিরে বলল, ‘মা, আমি কি কার্ড বানাবো?’
মা একটু থেমে বললেন, ‘হ্যাঁ মা, বানাও। তোমার বাবা কার্ডটা দেখবেন, জানো তো?’
সুহার চোখ জ্বলে উঠল, ‘আকাশ থেকে?’
মা হাসলেন, ‘হুম, আকাশ থেকে।’
সুহা একটা নীল কাগজে আকাশ আঁকল। সেখানে একটা তারা। তার নিচে ছোট্ট সে নিজে। পাশে লিখল-
‘বাবা, তুমি এখন তারা হয়ে গেছো। তবুও তুমি আছো আমার পাশে। যখন আমি হাঁটি, গল্প বলি, হাসি- তোমাকে মিস করি। হ্যাপি ফাদার্স ডে, বাবা!’
রোববার সকালে স্কুলে সবাই বাবাকে নিয়ে আসল। কেউ বাবার হাতে কার্ড দিল, কেউ আবৃত্তি করল।
সুহা নিজের কার্ড নিয়ে একা দাঁড়াল, তারপর মাথা উঁচু করে বলল, ‘আমার বাবা এখন আকাশে। কিন্তু তিনি সব দেখছেন। আমি আজ তাঁর জন্য এই কার্ড বানিয়েছি।’
সবার চোখ অশ্রুতে ভিজে গেল। মোহিনী মিস এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, ‘তোমার বাবার মেয়েটা যে অনেক সাহসী!’
সুহা জানাল, ‘আমি জানি, বাবা এখনো আমার গল্প শোনেন। আমি যখন চুপচাপ হই, তখন তিনি আমার পাশে বসেন- শুধু আমি দেখতে পাই না।’
সেই দিনটায় সুহার মন আর খারাপ হলো না। কারণ সে বুঝে গেল- ভালোবাসা আর বাবার উপস্থিতি শুধু চোখে দেখা যায় না... মনেও অনুভব করা যায়।’
প্যানেল
