
ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সন্তানের জন্মের খবর জানান ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান। তারপর থেকেই নিজের তৈরি চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে সন্তান পালনের নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তিনি। ওপেনএআই-এর নিজস্ব পডকাস্টে অল্টম্যান বলেন, “সেই প্রথম কয়েক সপ্তাহ ছিল প্রতিনিয়ত প্রশ্নে ভরা। এখন আমি ওর বিকাশ পর্যায়ের ব্যাপারে বেশি জিজ্ঞাসা করি।”
তিনি একা নন। আসলে অল্টম্যানের এই অভিজ্ঞতা এখন একটি বড় ট্রেন্ডের অংশ। ২০২৪ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, নতুন বাবা-মা’দের ৫২.৭% চ্যাটজিপিটিকে ব্যবহার করছেন সন্তান পালনের কৌশল জানার জন্য। অল্টম্যান নিজেও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “অবশ্যই মানুষ অনেক আগে থেকেই চ্যাটজিপিটি ছাড়াই শিশুদের লালন-পালন করে আসছে। কিন্তু আমি জানি না, এটা ছাড়া আমি কীভাবে পারতাম।”
আরও নির্দিষ্ট ও ব্যক্তিগত পরামর্শ পেতে অনেকেই বিশেষায়িত চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছেন। ‘ড. বেকি’ নামে পরিচিত জনপ্রিয় শিশু মনোবিজ্ঞানী বেকি কেনেডি তৈরি করেছেন ‘গুড ইনসাইড’ নামের একটি অ্যাপ। সেখানে বাবা-মা’রা তার লেখা ও ভিডিওর ওপর প্রশিক্ষিত চ্যাটবটের কাছে প্রশ্ন করতে পারেন।
২০২৩ সালের এআই বুমের সময় ‘ওথ কেয়ার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছিল ‘প্যারেন্টজিপিটি’। তবে প্রতিষ্ঠানটি গত বছর বন্ধ হয়ে যায়।
তবে গর্ভাবস্থা ও প্রসব-পরবর্তী সময়ের জন্যও এআই অ্যাপ জনপ্রিয় হচ্ছে। ‘সৌলা’ নামের একটি ২৪/৭ এআই ‘ডৌলা’ অ্যাপ ব্যবহারকারীদের গর্ভাবস্থা ও নবজাতক সংক্রান্ত প্রশ্নে তথ্যভিত্তিক পরামর্শ দেয়। অ্যাপটি ইতিমধ্যে ৭.৫ লাখ ডলার অর্থ সংগ্রহ করেছে। এটি জনপ্রিয় ‘ফ্লো হেলথ’ অ্যাপের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টের সমর্থন পেয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর সন্তান পালন সরঞ্জাম। উদাহরণস্বরূপ, ৪০০ ডলারের ‘নানিট’ বেবি মনিটর শিশুর নড়াচড়া রেকর্ড ও বিশ্লেষণ করে এবং সতর্কবার্তা দেয়। আবার কেউ চাইলে ১৫০০ ডলার দিয়ে এআই-চালিত স্মার্ট খাট অথবা ২৫০০ ডলার মূল্যের স্বয়ংচালিত, দোলনা দেওয়া স্মার্ট স্ট্রলার কিনতে পারেন।
এআই সহজে বিপুল তথ্য দেয়। কিন্তু অতিরিক্ত তথ্যভারে বাবা-মা বিভ্রান্ত হতে পারেন। যদিও এই নতুন ‘এআই-নির্ভর অভিভাবকত্ব’ নিয়ে গবেষণা খুব বেশি হয়নি, কিন্তু ইন্টারনেট থেকে সন্তান পালন পরামর্শ নেওয়ার ফলে আত্মবিশ্বাস কমে যেতে পারে বলে পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে।
২০২৩ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, যেসব বাবা-মা নিজেদের কম আত্মবিশ্বাসী মনে করেন, তারা বেশি বেশি অনলাইন খোঁজাখুঁজি করেন এবং এতে তাদের আত্মনির্ভরতা আরও কমে যায়। অর্থাৎ, যত বেশি খোঁজেন, তত বেশি খোঁজেন—একটা তথ্য-ভর্তির চক্রে ঢুকে পড়েন।
শিশু মনোবিজ্ঞানী এবং Post-Traumatic Parenting বইয়ের লেখক রবিন কসলোভিৎজ বলেন, তার অনেক রোগী আগে গুগল থেকে তথ্য নিয়ে আসতেন। এখন তারা বলেন, “চ্যাটজিপিটি বলেছে…”। ২০২৪ সালের কানসাস লাইফ স্প্যান ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অনেক বাবা-মা চ্যাটজিপিটিকেই তাদের স্বাস্থ্যসেবাদাতার চেয়েও বেশি বিশ্বাস করেন।
কসলোভিৎজ বলেন, “আজকাল বাবা-মায়েরা প্রবল আত্ম-সন্দেহে ভোগেন। এমন সময় চ্যাটজিপিটির মতো টুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের বোঝা কমিয়ে দেয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা গড়ে ওঠে তখনই, যখন আমরা নিজের বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করি।”
Second Life: Having a Child in the Digital Age বইয়ের লেখক ও নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর সাংবাদিক অ্যামান্ডা হেস প্রযুক্তিনির্ভর সন্তান পালন বিষয়ে সতর্কতা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “সব সময় চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকে পড়লে, কাছের মানুষদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ার যে মানসিক বন্ধন তৈরি হয়, তা হারিয়ে যায়।”
আবির