
ছবি: সংগৃহীত
গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ মনিটর ২০২৩-২০২৪-এর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে ২৪% সক্রিয়ভাবে ব্যবসা শুরু করছেন বা পরিচালনা করছেন। কিন্তু লিংকডইনের মতো প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকা এবং ব্যবসার উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে সময় সমন্বয় করাটা অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে উঠেছে। টিনএজ এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য অতিরিক্ত একটি চ্যালেঞ্জ হলো—নিজেকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরা, যেখানে প্রতিযোগী হিসেবে রয়েছেন অভিজ্ঞ পেশাদাররা।
আজকের দিনে লিংকডইন ব্যবসা উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, কিন্তু প্রচলিত লিংকডইন নেটওয়ার্কিং পদ্ধতিতে অনেক সময় ব্যয় হলেও ফলাফল অনিশ্চিত। তরুণ উদ্যোক্তারা স্কুল, পরিবার ও সীমিত সম্পদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা গড়ার পাশাপাশি এসব প্ল্যাটফর্মে সময় দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে থাকেন না। ফলে তারা দাঁড়িয়ে যান একটি দ্বিধার মুখে—হাতে সময় না থাকায় হয় আলাদা করে মেসেজ বানাতে পারেন না, না হলে পাঠান একঘেয়ে সাধারণ বার্তা।
এই সমস্যার মাঝামাঝি সমাধান এনে দিচ্ছে চ্যাটজিপিটি। এটি উদ্যোক্তাদের জন্য এমন একটি স্মার্ট সহায়তাকারী হয়ে উঠছে, যা ব্যক্তিক স্পর্শ বজায় রেখে স্কেলেবল নেটওয়ার্কিংয়ে সাহায্য করছে। বিশেষ করে তরুণদের জন্য এই AI টুলটি হয়ে উঠেছে সমতার এক শক্তিশালী হাতিয়ার, যা তাঁদের এমন কনটেন্ট ও যোগাযোগ তৈরি করতে সাহায্য করে যা অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম।
চলুন দেখি, কীভাবে স্মার্ট উদ্যোক্তারা লিংকডইনে পেশাদার সম্পর্ক গড়তে চ্যাটজিপিটিকে কাজে লাগাচ্ছেন:
১. ব্যক্তিত্ব হারানো ছাড়াই লিংকডইনে স্কেলযোগ্য যোগাযোগ গড়ে তোলা
প্রতিটি কানেকশন অনুরোধ বা ফলোআপ মেসেজ আলাদাভাবে লেখার চেষ্টা করলে সপ্তাহে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় চলে যায়। আবার একঘেয়ে বার্তা দিলে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় না।
চ্যাটজিপিটি এখানে ব্যালান্স করে দেয়। যেমন, আপনি চাইলে বলতে পারেন:
“আমি লিংকডইনে [নির্দিষ্ট পেশা/খাত]-এর পেশাজীবীদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই। আমাকে একটি কানেকশন মেসেজ টেমপ্লেট বানিয়ে দাও, যা আমি ব্যক্তিগত তথ্য অনুযায়ী সামান্য বদলাতে পারব। মেসেজটি পেশাদার, নির্দিষ্ট ও ২০০ অক্ষরের মধ্যে হোক।”
ফলোআপের জন্য আপনি লিখতে পারেন:
“আমি সম্প্রতি লিংকডইনে এমন একজনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি যিনি [ব্যাকগ্রাউন্ডের বিবরণ]। একটি ফলোআপ মেসেজ লেখো যেখানে তাঁর দক্ষতার উল্লেখ থাকবে, কিছু মূল্যবান তথ্য শেয়ার করব এবং একটি নির্দিষ্ট পরবর্তী পদক্ষেপ প্রস্তাব করব।”
এইভাবে কাঠামো তৈরি করে ব্যক্তিগত তথ্য সংযোজন করলে তা নিছক এআই টেক্সটের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর হয়।
২. আপনার লিংকডইন প্রোফাইলকে ক্লায়েন্ট আকর্ষণের উপযোগী করে তোলা
বেশিরভাগ উদ্যোক্তার প্রোফাইল দেখতে রিজিউমে’র মতো—পূর্বের চাকরির বিবরণে ভরা, যেখানে বর্তমান মূল্য বা ভবিষ্যতের সম্ভাবনার উল্লেখ কম।
চ্যাটজিপিটি এ সমস্যা কাটাতে সাহায্য করতে পারে।
প্রম্পট দিন:
“আমি [ইন্ডাস্ট্রি]-এর একজন উদ্যোক্তা, যারা [টার্গেট ক্লায়েন্ট]-কে [নির্দিষ্ট ফলাফল] অর্জনে সহায়তা করি। আমাকে একটি লিংকডইন হেডলাইন ও সামারি লিখে দাও, যা ক্লায়েন্ট, পার্টনার ও ইনভেস্টর আকর্ষণ করবে।”
হেডলাইন এমন হওয়া উচিত যাতে প্রশ্নের উত্তর মেলে: “কাকে কী সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন আপনি?”
যেমন:
“Startup Founder” না লিখে বলুন—
“রেস্টুরেন্টগুলোর আয় ৩০% বাড়াতে সাহায্য করি | ডেটা-ড্রিভেন মার্কেটিং | SaaS উদ্যোক্তা | ফুডটেক ইনোভেটর”
সারাংশে ক্লায়েন্টের অর্জন, আপনার গল্পের সারাংশ এবং একটি স্পষ্ট CTA দিন।
৩. যেমন কনটেন্ট, তেমন কানেকশন—লিংকডইনে সঠিক পোস্ট তৈরির কৌশল
অনেকেই লিংকডইনে নিয়মিত পোস্ট করেন না, আর যারা করেন, তাঁরা অনেক সময় এলোমেলো বিষয় নিয়ে পোস্ট করেন।
চ্যাটজিপিটির সাহায্যে আপনি কনটেন্ট আইডিয়া পেতে পারেন।
প্রম্পট দিন:
“আমি একটি [বিজনেস টাইপ] তৈরি করছি এবং লিংকডইনে [টার্গেট অডিয়েন্স] আকর্ষণ করতে চাই। এমন ১০টি পোস্ট আইডিয়া দাও, যা আমাকে এক্সপার্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং পাঠকের উপকারে আসবে।”
সেরা কনটেন্ট হয় যখন আপনি নিজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষণীয় দিক বা বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরেন।
৪. লক্ষ্য নির্ধারণ করে লিংকডইনে কানেকশন তৈরি করা
যেমন-তেমনভাবে কানেকশন রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে সময় নষ্ট করার কিছু নেই।
আপনি চাইলে বলতে পারেন:
“আমি [ব্যবসার বিবরণ] তৈরি করছি, এবং লিংকডইনে [নির্দিষ্ট পেশা/অভিজ্ঞতা]-এর লোকদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই। কী কী সার্চ টার্ম ব্যবহার করব? কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করব?”
কখনও ইনভেস্টর, কখনও পার্টনার বা মেন্টরের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করুন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে।
৫. লিংকডিনে মানসম্পন্ন সম্পৃক্ততা গড়ে তোলা, শুধু কানেকশন নয়
অনেকেই কানেকশন তৈরি করেই হারিয়ে যান। কিন্তু সাফল্য আসে নিয়মিত, মানসম্পন্ন সম্পৃক্ততায়।
চ্যাটজিপিটির প্রম্পট হতে পারে:
“আমি আমার লিংকডইন কানেকশনদের সঙ্গে নিয়মিত সংযোগ বজায় রাখতে চাই, তবে জোরপূর্বক নয়। এমন একটি রুটিন বানাও যেখানে আমি অন্যদের কনটেন্টে অংশ নিতে পারি, তথ্যভিত্তিক কিছু শেয়ার করতে পারি এবং সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করতে পারি।”
ভাল মন্তব্য করতে চাইলে লিখুন:
“দারুণ পোস্ট!” না বলে বলুন—
“এটা আমাদের কোম্পানির অনুরূপ একটি চ্যালেঞ্জের কথা মনে করিয়ে দিল। আমরা তখন [বিশেষ অভিজ্ঞতা] কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছিলাম। আপনার দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ধন্যবাদ।”
চ্যাটজিপটি লিংকডইনে কাঠামো, টেমপ্লেট, এবং পরিকল্পনার খসড়া দিতে পারে; কিন্তু আসল সফলতা আসে আন্তরিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরিতে সময় দেওয়ার মাধ্যমে।
তরুণ উদ্যোক্তারা—বিশেষ করে টিনএজাররা—এই প্রযুক্তিগত সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারেন, যদি তাঁরা শুরু করেন প্রোফাইল অপ্টিমাইজ করা বা মাসিক কনটেন্ট প্ল্যান তৈরি করার মতো ছোট কাজ দিয়ে।
তাঁদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো অভিযোজন ক্ষমতা এবং নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে প্রস্তুতি—যা আজকের দিনে বড় সম্পদ।
আবির