ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

পবিত্র কোরআনে ইহুদি জাতির বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে যা বলা হয়েছে

প্রকাশিত: ১৪:৫২, ২৪ জুন ২০২৫

পবিত্র কোরআনে ইহুদি জাতির বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে যা বলা হয়েছে

ছবি: সংগৃহীত

ইহুদি ধর্মকে আসমানি ধর্মগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূলত মহান আল্লাহর প্রেরিত নবী হজরত মুসা (আ.)-এর অনুসারীরা এই ধর্মের অনুসারী। তাদেরকে সাধারণভাবে বনি ইসরাইল নামে ডাকা হয়। যদিও শুরুতে তারা আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী ছিল, তবে সময়ের পরিক্রমায় তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে নানা বিকৃতি ঘটে। পবিত্র কোরআনে বনি ইসরাইল তথা ইহুদি জাতির আচরণ, চরিত্র, গুণাবলি ও ত্রুটিসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।

কোরআনের আলোকে বনি ইসরাইলের বিশ্বাসঘাতকতা ও অন্য দোষত্রুটি:

১. বিশ্বাসঘাতকতা ও অঙ্গীকার ভঙ্গ:

কোরআনে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, বনি ইসরাইল চুক্তি ও অঙ্গীকার রক্ষা করত না। ইরশাদ হয়েছে, “তারা যখনই অঙ্গীকার করেছে, তখনই তা ভঙ্গ করেছে, বরং তাদের অধিকাংশই অবিশ্বাসী।” (সুরা বাকারা, আয়াত ১০০)

২. মুমিনদের প্রতি শত্রুতা:

ইহুদিরা সবসময় মুমিনদের বিরোধিতা করেছে। কোরআনে বলা হয়েছে, “আপনি মানুষের মধ্যে ইহুদি ও মুশরিকদের সবচেয়ে বেশি শত্রুভাবাপন্ন পাবেন।” (সুরা মায়িদা, আয়াত ৮২)

৩. অর্থলোভ ও প্রতারণা:

তাদের মধ্যে অতিমাত্রায় ধূর্ততা ও অর্থলোভ ছিল। (সুরা হাশর, আয়াত ১৩)

৪. বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রবণতা:

বনি ইসরাইল সুযোগ পেলেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত। কোরআনে বলা হয়েছে, “তারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা করে বেড়ায়, আল্লাহ বিশৃঙ্খল ব্যক্তিদের ভালোবাসেন না।” (সুরা মায়িদা, আয়াত ৬৪)

৫. দীর্ঘায়ুর মোহ:

তারা জীবনের প্রতি এতটাই মোহগ্রস্ত ছিল যে মুশরিকদের চেয়েও বেশি আয়ুর আশা করত। (সুরা বাকারা, আয়াত ৯৬)

৬. আল্লাহ সম্পর্কে কটুক্তি:

ইহুদিরা আল্লাহকে ‘অভাবগ্রস্ত’ বলেও কটুক্তি করেছে। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮১)

৭. নিজেদের আল্লাহর সন্তান দাবী:

তারা নিজেদের আল্লাহর পুত্র ও প্রিয়জন বলে দাবি করেছে, যা কোরআনের ভাষায় অযৌক্তিক। (সুরা মায়িদা, আয়াত ১৮)

৮. অপর জাতিকে তুচ্ছ জ্ঞান:

তারা নিরক্ষর মানুষদের উপেক্ষা করে এবং তাদের ওপর কোনো দায়িত্ব নেই বলে মনে করত। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৭৫)

৯. নবীদের হত্যা:

বনি ইসরাইলের বড় অপরাধ ছিল আল্লাহর নবীদের হত্যা করা। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ২১)

১০. আল্লাহর অভিশাপ ও শাস্তি:

তাদের অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘনের কারণে আল্লাহ তাদের ওপর অভিশাপ আরোপ করেন এবং তাদেরকে লাঞ্ছিত ও শাস্তিপ্রাপ্ত জাতিতে পরিণত করেন। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১১২)

১১. বারবার শাস্তির সম্মুখীন হওয়া:

ইতিহাসজুড়েই বনি ইসরাইল শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন, পরাধীনতা ও অপমানজনক জীবনের শিকার হয়েছে। (সুরা আরাফ, আয়াত ১৬৭)

পবিত্র কোরআনের আলোকে স্পষ্ট হয় যে, ইহুদি জাতি এক সময় আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত হলেও নিজেদের অপরাধ, অহংকার, অবাধ্যতা ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তাদের ওপর নেমে এসেছে মহান আল্লাহর শাস্তি ও অভিশাপ। এসব ঘটনা আজও বিশ্ববাসীর জন্য শিক্ষণীয় হয়ে আছে।

আলীম

×