ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

দাওয়াত-ই-দীনের গুরুত্ব ও কৌশল

মোসাঃ তানজিলা, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ০৯:২১, ২১ জুন ২০২৫

দাওয়াত-ই-দীনের গুরুত্ব ও কৌশল

ছবি: সংগৃহীত

"তোমরা আল্লাহর দাসত্ব করো এবং তাগুতের গোলামী পরিহার করো" (সূরা নাহল, আয়াত ৩৬)।
‘দাওয়াত’ শব্দের অর্থ হলো আহ্বান করা বা ডাকা। ইসলামের দৃষ্টিতে দাওয়াত বলতে মানুষকে সকল প্রকার দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর দিকে আহ্বান করাকে বোঝায়। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার পাশাপাশি মানুষকে প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। প্রশ্ন জাগতে পারে, প্রতিনিধির কাজ কী? প্রতিনিধির কাজ হলো আল্লাহর বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনার পাশাপাশি অন্যকে আহ্বান করা। তবে আল্লাহ্ তায়ালা কাউকে বাধ্য করেননি। হিদায়াত আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। মানুষের পথপ্রদর্শক হলেন নবী-রাসূলগণ। নবী-রাসূলদের আনীত হিদায়াত মানবজাতির কাছে পৌঁছে দেওয়া খিলাফাতের দায়িত্ব। খিলাফাতের দায়িত্ব পালন করাই দাওয়াতের কাজ।

"দীনের মধ্যে কোনো প্রকার জোর-জবরদস্তি নেই; ভ্রান্ত পথ থেকে সঠিক পথ সুস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। অতএব, যে তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি ঈমানের ঘোষণা দেয়, সে এমন এক মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা কখনো ছিন্ন হওয়ার নয়।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৫৬)

দাওয়াত প্রদানকারীকে বলা হয় ‘দা’য়ী ইলাল্লাহ’। নবী-রাসূলগণ ছিলেন দা’য়ী ইলাল্লাহ।

"উঠো, সতর্ক করো এবং তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ও সার্বভৌমত্বের ঘোষণা দাও।" (সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত ২-৩)
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “তোমরা যা জানো তা অপরকে জানিয়ে দাও, কুরআনের একটি আয়াত হলেও।”
সর্বপ্রথম কাকে এবং কীভাবে দাওয়াত দিতে হবে তা রাসূলের জীবনী থেকেই দেখা যায়। রাসূল (স.) প্রথমে তাঁর ঘনিষ্ঠ লোকদের দাওয়াত দিয়েছেন—যেমন: খাদিজা (রা.), আবু বকর (রা.), আলী (রা.), যায়েদ (রা.)। কুরআনে বলা হয়েছে, "তোমার নিকটজনদের সতর্ক ও সাবধান করো" (সূরা আশ-শোয়ারা, আয়াত ২১৪)। কাউকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করা বা দাওয়াতের মূল ফ্যাক্টর হলো দাওয়াতদানকারী নিজেই। তার বাস্তব জীবন, আমল-আখলাক, আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য—সবই দাওয়াতের অংশ।

যেমন: নিজে নামাজ না পড়ে অন্যকে নামাজের দাওয়াত দিলে তা কি ফলপ্রসূ হবে? রাসূল (স.) নবুয়ত লাভের পূর্বেও জাহেলি সমাজ তাঁর বাহ্যিক কোনো নিন্দনীয় চারিত্রিক দিক খুঁজে পায়নি।

"আল্লাহ বলেন, তার কথার চাইতে আর কার কথা উত্তম হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে এবং ঘোষণা করে 'আমি একজন মুসলিম'?" (সূরা হা-মীম আস-সাজদা, আয়াত ৩৩)
দাওয়াতের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধের মাধ্যমে ব্যক্তি যেমন পরিবর্তিত হয়, তেমনি নিজের আমল-আখলাক বাড়ে। ফলে ব্যক্তি উন্নত হলে সমাজ উন্নত হয়, সমাজ উন্নত হলে রাষ্ট্র উন্নত হয়। এতে ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি স্থাপিত হয়।

দাওয়াত মানে আহ্বান করা। মানুষকে দ্বীনের পথে আহ্বান করতে হবে কিভাবে, তা আল্লাহ্ তায়ালা কুরআনে বলে দিয়েছেন:
"তোমার রবের দিকে দাওয়াত দাও হিকমত ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে; তাদের সাথে বিতর্ক করো উত্তম পন্থায়।" (সূরা আন-নাহল, আয়াত ১২৫)

এই আয়াত বিশ্লেষণ করলে তিনটি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে।
প্রথমত, হিকমাহ—অর্থাৎ বুদ্ধিমত্তা, কৌশল, দক্ষতা ও আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করে দাওয়াত দেওয়া। ইলম অর্জনের পাশাপাশি তা আমলে পরিণত করা। নিজের ব্যক্তিজীবন ও উত্তম আখলাক দ্বারা দাওয়াত দিতে হবে।
"রাসূলুল্লাহর জীবনের মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য অনুসরণযোগ্য উত্তম আদর্শ।" (সূরা আহযাব, আয়াত ২১)

দ্বিতীয়ত, উত্তম উপদেশ—দাওয়াতদানকারীকে কল্যাণকামী হতে হবে, মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, রুক্ষ আচরণ নয় বরং উৎসাহব্যঞ্জক আচরণ করতে হবে।

তৃতীয়ত, বিতর্ক এড়িয়ে চলা।
"আল্লাহর প্রিয় বান্দারা নম্রভাবে চলাফেরা করে, অজ্ঞ লোকেরা তাদের কটাক্ষ করলে তারা শান্তভাবে সালাম দিয়ে সরে পড়ে।" (সূরা আল-ফুরকান, আয়াত ৬৩)
তবে যদি বিতর্ক এড়ানো না যায়, তাহলে তা করতে হবে উত্তম আচরণের মাধ্যমে।
"মন্দের প্রতিশোধ দাও উত্তম ব্যবহার দিয়ে।" (সূরা মুমিনুন, আয়াত ৯৬)

মুমু ২

×