ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

এক নজরে ইরান

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ২১ জুন ২০২৫

এক নজরে ইরান

ছবি: সংগৃহীত

ইরান একটি বিশাল ও বৈচিত্র্যময় দেশ, যার জনসংখ্যা প্রায় ৯২ মিলিয়ন। এটি বিশ্বের ১৭তম বৃহত্তম দেশ, জনসংখ্যা ও আয়তনের দিক থেকে। ২০২৫ সালের ১৩ জুন ইসরায়েলের হামলার পর দেশটি আবারও আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে চলে এসেছে।

ইরান উত্তর দিকে কাস্পিয়ান সাগর থেকে শুরু করে দক্ষিণের ওমান উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এর ভৌগলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই দেশের ভেতর দিয়েই বয়ে যায় হরমুজ প্রণালী—যেখানে দিয়ে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ হওয়া তেলের ২০ শতাংশ চলাচল করে।

অর্থনীতি ও শিক্ষা
ইরানের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রায় ৪১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি বিশ্বে ৩৬তম বৃহত্তম অর্থনীতি। দেশের বেকারত্বের হার প্রায় ৭.২ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮৯ শতাংশ, আর যুবসমাজে এই হার প্রায় ৯৯ শতাংশ। তবে গ্রাম ও শহরের মধ্যে এই হার কিছুটা ভিন্ন।

তেল ও গ্যাস উৎপাদনে ইরান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ। এটি তেলের ক্ষেত্রে নবম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

জনসংখ্যা ও প্রধান শহরগুলো
ইরানের অধিকাংশ মানুষ দেশটির পশ্চিমাংশে বসবাস করে। পাহাড়, নদী ও উর্বর উপত্যকা অঞ্চলে জনসংখ্যা ঘন। রাজধানী তেহরান শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৯.৬ মিলিয়ন, যা ১৭৯৫ সাল থেকে রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

নর্থ-ইস্টে মাশহাদ শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৩.৪ মিলিয়ন এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। অন্য শহরগুলোর মধ্যে ইসফাহান (২.৩ মিলিয়ন), শিরাজ, তাবরিজ, করাজ, কোম ও আহভাজ গুরুত্বপূর্ণ।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ ৩৯ বছরের নিচে। মধ্যবয়স প্রায় ৩৩ থেকে ৩৪ বছর। শহরাঞ্চলে বসবাসকারীর হার প্রায় ৭৭ শতাংশ, অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষ শহরে বসবাস করে।

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পরে জন্ম নেওয়া তরুণদের সংখ্যা দেশটিতে বেশি, ফলে ইরান একটি তরুণপ্রধান রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেক দক্ষ পেশাজীবী দেশ ত্যাগ করেছেন।

জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য
ইরান একটি জাতিগত ও সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ। এখানে পার্সিয়ান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৬১ শতাংশ। আজারবাইজানি ১৬ শতাংশ, কুর্দ ১০ শতাংশ, লুর ৬ শতাংশ এবং আরব, বেলুচ ও তুর্কিক গোষ্ঠীর সংখ্যা ২ শতাংশ করে।

ধর্মীয় দিক থেকে শিয়া মুসলিমরা দেশের ৯০ শতাংশ, সুনিরা ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা (যেমন: বাহাই, খ্রিস্টান, ইহুদি, জোরোস্ট্রিয়ান) প্রায় ১ শতাংশ। ইরানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে এই জাতিগত বৈচিত্র্য আরও বেশি চোখে পড়ে।

ভাষা ও সংস্কৃতি
ফার্সি (পার্সিয়ান) ইরানের জাতীয় ভাষা হলেও বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় ভাষা ও উপভাষাও প্রচলিত। সংস্কৃতির দিক থেকে এটি হাজার বছরের ইতিহাসে সমৃদ্ধ একটি দেশ।

ইরান শুধু তেল, যুদ্ধ কিংবা রাজনীতি দিয়ে পরিচিত নয়। এর ভৌগোলিক অবস্থান, তরুণ জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় বৈচিত্র্য ও প্রাচীন সংস্কৃতি দেশটিকে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

মুমু ২

×