
ছবি: সংগৃহীত।
ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমান—এই তিন জাতিকে ইসলাম চিহ্নিত করে আহলে কিতাব হিসেবে। কারণ, মহান আল্লাহ তাআলা হেদায়েতের জন্য এই তিন জাতির প্রতিই কিতাব নাজিল করেছেন। হযরত মূসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত, হযরত ঈসা (আ.)-এর ওপর ইঞ্জিল এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর নাজিল হয় সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ কিতাব আল-কোরআন।
তবে দুঃখজনকভাবে, আজকের ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের আদি কিতাব ও ধর্মীয় আদর্শ থেকে বহু দূরে সরে গেছে। বহুবার তারা তাদের কিতাব বিকৃত করেছে নিজেদের স্বার্থে। যার পরিণতিতে ইহুদি জাতি ধীরে ধীরে পতিত হয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা, দাম্ভিকতা ও শিরকে।
ইসলামে বনী ইসরাইলের (ইহুদি জাতি) ইতিহাসকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। কোরআনে হযরত মূসা (আ.) সম্পর্কে আলোচনা এসেছে সর্বাধিকবার। বনী ইসরাইলকে আল্লাহর পক্ষ থেকে অসংখ্য নিয়ামত ও নবী দান করা হয়েছে, কিন্তু তারা ছিল চূড়ান্ত অকৃতজ্ঞ।
ইহুদি জাতির উৎপত্তি
ইহুদি জাতি শুরু হয় হযরত ইসহাক (আ.)-এর সন্তান হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর বংশধর থেকে, যিনি ছিলেন ‘ইসরাইল’ উপাধিপ্রাপ্ত। তাঁর সন্তানরাই বনী ইসরাইল নামে পরিচিতি পান। মূলত হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর দুই পুত্রের মাধ্যমে মুসলিম ও ইহুদি জাতির সূচনা হয়। হযরত ইসমাইল (আ.)-এর বংশে জন্ম নেন হযরত মুহাম্মদ (সা.), আর হযরত ইসহাক (আ.)-এর বংশে জন্ম নেন হযরত মূসা (আ.)।
কিভাবে হলো পতন
ইহুদি জাতি যখন একত্ববাদ ও নবীদের অনুসরণ থেকে সরে দাঁড়াল, তখনই তাদের পতনের শুরু। তাওরাত ধ্বংস হলে তারা নিজেদের স্মৃতি থেকে ধর্মগ্রন্থ পুনর্লিখন করে এবং হযরত উজাইর (আ.)-কে ‘আল্লাহর পুত্র’ হিসেবে ঘোষণা করে বসে। তারা কুরআনে ঘোষিত ঈমানদার নবীদেরকেও অস্বীকার করতে থাকে।
আসলে হযরত ইব্রাহিম (আ.) কিংবা মূসা (আ.) কেউই ইহুদি ছিলেন না, তারা ছিলেন মুসলিম। কোরআনে আল্লাহ বলেন: "ইব্রাহিম ছিলেন না ইহুদি, না খ্রিস্টান; বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম, এবং তিনি ছিলেন না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত।" (সূরা আলে ইমরান: ৬৭)
ইহুদি জাতি কেবল সত্য অস্বীকারেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং তারা ইসলাম ও হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। যদিও তাদের ধর্মগ্রন্থে শেষ নবীর আগমনের সুসংবাদ ছিল, তারা হিংসা ও গোঁড়ামির বশবর্তী হয়ে সত্য গ্রহণে ব্যর্থ হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা
মদিনায় নবীজী (সা.) হিজরত করলে ইহুদিদের তিনটি গোত্র—বনু কাইনুকা, বনু নাজির ও বনু কুরাইজা—তাদের সঙ্গে চুক্তি করেও একের পর এক বিশ্বাসঘাতকতা করে। কখনো মুসলিম নারীর অপমান, কখনো নবীজীকে হত্যা প্রচেষ্টা, আবার কখনো যুদ্ধের ময়দানে মুসলিমদের পেছন থেকে আক্রমণের পরিকল্পনা—সবই করেছে এই গোত্রগুলো।
কোরআনের ঘোষণা: ইহুদিরা মুসলিমদের চরম শত্রু
"তুমি অবশ্যই দেখতে পাবে, ইয়াহুদী ও মুশরিকরাই মুসলমানদের প্রতি সবচেয়ে বেশি শত্রুতা পোষণ করে..." (সূরা আল-মায়েদা: ৮২)
এই শত্রুতা সাময়িক নয়; এটি গভীর, সুদীর্ঘ এবং ধারাবাহিক। ইহুদিদের চরিত্রে রয়েছে জেদ, অহংকার, নবীদের হত্যার ইতিহাস, এবং সত্য অস্বীকারের প্রবণতা। এজন্যই তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হয়েছে।
ভবিষ্যদ্বাণী: মুসলিমদের হাতে ইহুদিদের পরাজয়
রাসূল (সা.)-এর হাদিসে এসেছে: "কেয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না মুসলমানরা ইহুদিদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। তখন গাছ ও পাথর বলবে—হে মুসলমান, আমার পেছনে একজন ইহুদি লুকিয়ে আছে, তাকে হত্যা করো।" (সহীহ মুসলিম)
ইহুদি জাতির পতনের পেছনে রয়েছে তাদের ঈমানহীনতা, দম্ভ, নবীদের অমান্য করা এবং মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ। তাদের ইতিহাস শুধু ব্যর্থতার নয়—বিশ্বাসঘাতকতারও। আর সেই কারণেই কোরআন ও হাদিসে তাদের অভিশপ্ত জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=trDfJoWEmPM&ab_channel=NEWS24
নুসরাত