
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান সময়ে চাকরি ছেড়ে ফুলটাইম উদ্যোক্তা হওয়া যেন এক ধরনের সামাজিক চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই মনে করেন, সফল হতে হলে “সবকিছু ছেড়ে দিয়ে নিজের স্বপ্নকে অনুসরণ করাই” একমাত্র পথ। কিন্তু বাস্তবতা হলো—সবাই সেই পথে হাঁটার জন্য নয়। ব্যবসা সাইড হাসল হিসেবে পরিচালনা করাও একটি সুসংবদ্ধ, কার্যকর এবং টেকসই সিদ্ধান্ত হতে পারে।
অনলাইন উদ্যোক্তা জগতে ৯-৫ চাকরির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রায়শই লক্ষ্য করা যায়। সাইড হাসল থাকা সত্ত্বেও অনেক ব্যবসায়ী নিজেদের “অপর্যাপ্ত” মনে করেন, কারণ তাঁরা ফুলটাইম উদ্যোক্তা হননি বা চাকরি ছাড়তে পারেননি।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে—ব্যবসা সাইড হাসল হিসেবেই পরিচালনা করলে সেটা যে ভুল বা অপ্রতিষ্ঠিত—এমনটা নয়। বরং, সঠিক পরিকল্পনা ও সৃজনশীলতা থাকলে সাইড হাসল হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সফলতার ভিত্তি। নিচে এমন ৬টি পেশাদার কারণ তুলে ধরা হলো, যা প্রমাণ করে—সাইড হাসল হওয়াটাও একটি স্মার্ট সিদ্ধান্ত।
১. অতিরিক্ত আয়ের উৎস ব্যবসার ওপর আর্থিক চাপ কমায় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা আনে
যখন ব্যবসা একমাত্র জীবিকা হয় না, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় অনেক বেশি দূরদর্শিতার সঙ্গে। আর্থিক অনিশ্চয়তা ও মানসিক চাপে না ভুগে উদ্যোক্তা তাঁর ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে আরও সুপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিতে পারেন।
ব্যবসা শুরুর সময় নানা ছোটখাটো কাজ, যেমন—বেবিসিটিং, যোগা প্রশিক্ষণ বা ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করে যারা নিজেদের পথ তৈরি করেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা বলে দেয়—এ ধরনের সাপোর্টিভ ইনকাম ব্যবসাকে ধীরে কিন্তু স্থায়ী ভিত্তিতে দাঁড় করাতে সাহায্য করে।
২. পরিসংখ্যান বলছে—যুক্তরাষ্ট্রে ৯৩% কর্মজীবী মানুষ সাইড হাসল করেন
সাইড হাসল কোনো ব্যতিক্রম নয়, বরং আধুনিক সময়ের একটি বাস্তবতা।
-
প্রতি মাসে গড় আয় ৪৮৩ ডলার
-
প্রতি ৫ জনে ১ জন বছরে ১৫,০০০ ডলার বা তার বেশি আয় করেন
এই তথ্যগুলো প্রমাণ করে—সাইড হাসল রাখাকে ‘অসফলতা’ হিসেবে দেখা অনুচিত। অনেকেই মূল চাকরির পাশাপাশি প্যাশন প্রজেক্ট হিসেবে ছোটখাটো কাজ শুরু করে পরবর্তীতে বড় ব্যবসায় রূপ দিয়েছেন।
৩. ব্যবসা সাইড হাসল হিসেবে শুরু করলে এর উপযোগিতা, সম্ভাবনা ও আগ্রহ যাচাই করার সুযোগ থাকে
ফুলটাইম সময় দেওয়ার আগে উদ্যোক্তা সহজেই বুঝতে পারেন—এই কাজটি তিনি সত্যিই উপভোগ করছেন কি না।
এতে যদি পরবর্তীতে ব্যবসাটি থামিয়ে অন্য কিছুর দিকে মনোযোগ দিতে হয়, তবুও জীবনে বড় ধরনের অস্থিরতা আসে না। এটি উদ্যোক্তাকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেয়।
৪. সাইড হাসল থাকলে অন্যান্য আগ্রহ একসঙ্গে অনুসরণ করা যায়
অনেক পেশাদার ব্যক্তি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।
একজন শিক্ষক ফটোগ্রাফি ভালোবাসতে পারেন, একজন কর্পোরেট কর্মী গ্রাফিক ডিজাইন করতে আগ্রহী হতে পারেন, আবার আইনজীবী হয়েও কেউ স্বাস্থ্য ও ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে পারেন। সাইড হাসল তাঁদের এই আগ্রহগুলো অনুসরণ করার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেয়, যা পেশাগতভাবে তাঁদের আরও ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলে।
৫. সময় সীমিত থাকলে কাজের উৎপাদনশীলতা বাড়ে
যখন ব্যবসার জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ থাকে (যেমন, চাকরির পরবর্তী সময়), তখন সেই সময়টুকু আরও বেশি ফোকাসড ও কার্যকর হয়।
সাইড হাসলকারী উদ্যোক্তারা সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হন এবং অপ্রয়োজনীয় সময় নষ্ট না করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে মনোযোগ দেন। এর ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং ব্যবসার অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়।
৬. সাইড হাসল মানেই অতিরিক্ত আয়ের উৎস, যা আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়ায়
একাধিক আয়ের উৎস থাকলে তা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
সাইড হাসল হতে পারে রিয়েল এস্টেট, অনলাইন কোর্স, ডিজিটাল প্রোডাক্ট, ফ্রিল্যান্সিং বা অন্য যেকোনো প্যাশন-ভিত্তিক কাজ। তা থেকে মাসে ৪০০ ডলার আয় হলেও সেটি বিশাল অর্জন, কারণ এতে ব্যক্তিগত লক্ষ্য পূরণ সহজ হয় এবং ভবিষ্যতের ঝুঁকি কমে।
ব্যবসা সাইড হাসল হিসেবে পরিচালনা করা মানেই আপনি কম উদ্যোক্তা নন। বরং এটি বাস্তবতা, স্বাধীনতা ও বিচক্ষণতার পরিচায়ক। প্রত্যেকের সফলতার সংজ্ঞা ভিন্ন। তাই কারো ছাঁচে নিজেকে ফেলা নয়—নিজের পথ নিজেই ঠিক করুন, এবং নিজের শর্তেই সফল হন।
আবির