
ছবিঃ সংগৃহীত
সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের উপকণ্ঠে একটি গ্রীক অর্থোডক্স গির্জায় রোববার প্রার্থনারত মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে এক হামলাকারী। এতে অন্তত ২৫ জন নিহত ও ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা (SANA)।
ঘটনাটি ঘটেছে দামাস্কাসের ডুয়েইলা (Dweil’a) এলাকার মার এলিয়াস গির্জায়। সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সানা জানায়, নিহতদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে বলে স্থানীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে।
“মানুষ নিরাপদে ঈশ্বরের চোখের সামনে প্রার্থনা করছিলেন,” বলেন গির্জার পাদ্রী ফাদী ঘাটাস। “আমি নিজ চোখে অন্তত ২০ জনের মৃতদেহ দেখেছি। তখন গির্জায় প্রার্থনায় ছিলেন প্রায় ৩৫০ জন।”
সিরিয়ায় গত কয়েক বছরে গির্জায় এ ধরনের হামলা এই প্রথম। ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটলো, যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী ইসলামপন্থিদের প্রভাবাধীন অবস্থায় সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে। প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারার দেশব্যাপী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশটিতে জঙ্গি সংগঠনের ঘুমন্ত সেলের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
রবিবার এখনো পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর একজন সদস্য গির্জায় প্রবেশ করে প্রথমে গুলি চালায় এবং পরে নিজের শরীরে বাঁধা বিস্ফোরক ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটায়। প্রত্যক্ষদর্শীরাও একই ধরনের বর্ণনা দিয়েছেন।
গির্জায় জঙ্গি হামলা: আতঙ্ক আর রক্তের ছাপ
হামলার পরের দৃশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, হামলাকারীর মুখ ঢাকা ছিল। সে ভেতরে ঢুকে গুলি চালাতে থাকে। পরে প্রার্থনারতদের একটি দল হামলাকারীকে ঠেকাতে গেলে, সে গির্জার প্রবেশমুখেই বিস্ফোরণ ঘটায়।
গির্জার পুরোহিত মেলেটিয়াস শাহাতি জানান, সেখানে আরও একজন বন্দুকধারী ছিল, যে গির্জার দরজার দিকে গুলি চালিয়েছিল, তারপর প্রথম হামলাকারী নিজেকে উড়িয়ে দেয়।
প্রার্থনায় থাকা ইসসাম নাসের বলেন, “আমি মানুষকে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে দেখেছি। আমরা জীবনে কখনও ছুরি ধরি না, কেবল প্রার্থনাই করি।”
জরুরি সেবা ও প্রতিক্রিয়া
বিস্ফোরণের পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী ও উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আতঙ্কিত মানুষ আর্তনাদ করতে থাকেন। একজন নারী হাঁটু গেড়ে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সানার প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, গির্জার বেঞ্চগুলো ধ্বংসস্তূপ ও রক্তে ছেয়ে গেছে।
সরকারি প্রতিক্রিয়া
সিরিয়ার তথ্যমন্ত্রী হামজা মোস্তাফা হামলাটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এই কাপুরুষোচিত কাজ আমাদের সম্মিলিত নাগরিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। আমরা সমান নাগরিক অধিকারের অঙ্গীকার থেকে পিছিয়ে আসবো না। একইসাথে সরকার এই ধরনের অপরাধী সংগঠন দমনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।”
মুমু