
ছবি: সংগৃহীত
প্রতিদিন রাতে ঘুমের আগে আমরা স্বপ্নে পাখি হয়ে উড়তে চাই। ধরুন আপনি এখন একটি লাল-লেজওয়ালা বাজপাখি। শত ফুট ওপরে আকাশে ভেসে চলেছেন, চোখ রাখছেন নিচের জমিনে। এক জায়গায় একটি কাঠবেড়ালিকে চোখে পড়ল—ধূসর রঙের পশমে মিশে গেছে মাটির রঙে।
এই দৃশ্য থেকেই প্রশ্ন আসে—সবচেয়ে ভালো চোখের মালিক আসলে কে? বাজপাখি? ঈগল? মাছি? নাকি সাগরের নিচে লুকিয়ে থাকা রহস্যময় প্রাণী?
নিখুঁত চোখ নেই, তবে কিছু চোখ সত্যিই ব্যতিক্রম
অধ্যাপক এস্টেবান ফার্নান্দেজ-জুরিসিচ, পার্ডু ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী, বলেন, ‘একটি নিখুঁত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন প্রাণী নেই। চোখ অনেক শক্তি খরচ করে, তাই প্রকৃতি প্রতিটি প্রাণীকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী চোখ দিয়েছে।’
সবচেয়ে নিখুঁত দৃষ্টি: শিকারি পাখি
ঈগল, বাজ, ফ্যালকনের মতো র্যাপটর শ্রেণির পাখিদের দৃষ্টিশক্তি মানুষের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি স্পষ্ট। তাদের চোখ শরীরের তুলনায় বড় এবং রেটিনায় রয়েছে প্রচুর সংখ্যায় আলোকসংবেদনশীল কোষ। ফলে দূরের শিকারও সহজে চোখে পড়ে।
সবচেয়ে বেশি রঙ দেখা যায়: ম্যান্টিস শ্রিম্প
রঙ দেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে অদ্ভুত ক্ষমতা রাখে সমুদ্রের গাঢ় রঙের প্রাণী ম্যান্টিস শ্রিম্প। মানুষ যেখানে তিন ধরনের ফোটোরিসেপ্টর দিয়ে লাল, সবুজ, নীল দেখে, সেখানে ম্যান্টিস শ্রিম্পের চোখে রয়েছে ১২ রকমের রঙ চেনার কোষ! এমনকি তারা অতি বেগুনি (UV) রশ্মিও দেখতে পারে।
প্রফেসর জাস্টিন মার্শাল বলেন, ‘তারা হয়তো আমাদের চেয়ে চারগুণ বেশি রঙ দেখতে পায় না, বরং এক ভিন্ন কৌশলে রঙ বিশ্লেষণ করে।’
সবচেয়ে দ্রুতগতির চোখ: পোকামাকড়
মানুষের চোখ প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬০টি ফ্রেম দেখতে সক্ষম। কিন্তু মাছি বা মৌমাছির মতো পোকামাকড় সেকেন্ডে কয়েকশ’ ফ্রেম দেখতে পায়! তাই আপনি যখন হাতে তালি দিয়ে মাছিকে মারতে যান, তখন সে আগেই আপনার গতিবিধি দেখে ফেলে।
তাদের এই সক্ষমতা এসেছে ক্ষুদ্র দেহের কারণে। চোখ থেকে মস্তিষ্কে সংকেত পৌঁছাতে তাদের কম সময় লাগে।
প্রতিটি চোখেরই সীমাবদ্ধতা রয়েছে
যেমন ম্যান্টিস শ্রিম্প বা পোকামাকড়ের চোখ ‘কম্পাউন্ড আই’, অর্থাৎ ছোট ছোট ইউনিটে ভাগ করা। এতে তারা দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারলেও, ছবি হয় অনেক কম রেজুলেশনের—যেন মোবাইলের পিক্সেল ভাঙা ছবি।
তাহলে মানুষের চোখ কেমন?
প্রফেসর থমাস ক্রোনিন বলেন, ‘মানবচোখ অনেকটা সুষম ব্যবস্থা। আমি ম্যান্টিস শ্রিম্প হতে চাই না, কারণ তখন আমার মস্তিষ্ক হবে এক চিমটি মটরের সমান!’
দৃষ্টিশক্তির দৌড়ে কেউ সেরা নয়, বরং প্রত্যেক প্রাণী তার প্রয়োজনমতো চোখ পেয়েছে। শিকারি পাখি চায় দূরদৃষ্টি, শ্রিম্প চায় রঙ চিনতে, মাছি চায় চোখের পলকে পালাতে। আর মানুষ? সে চায় দেখতে, বুঝতে ও অনুভব করতে—যেটা তার চোখ তাকে যথেষ্টই সাহায্য করে।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স।
রাকিব