“অকৃতজ্ঞতা, তুমি পাথুরে হৃদয়ের দানব…” — শেক্সপিয়রের এই বাক্য আজ যেন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের কণ্ঠস্বর। ২০২৫ সালে এসে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক দেশই আর একনিষ্ঠ রক্ষক নয়, বরং এক অনিশ্চিত ও দ্বিধান্বিত পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দেখছে। একদিকে ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতির ঘাটতি, অন্যদিকে সিদ্ধান্তহীনতা ও স্বার্থপর মনোভাব—সব মিলিয়ে মিত্র দেশগুলো আজ দিশেহারা।
পাকিস্তানের ঘটনা এর সাম্প্রতিক প্রমাণ। দেশটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইরানে বিমান হামলা চালায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতিতে ভরসা করে আসছে তার মিত্রেরা। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ ও ইরান-ইসরায়েল সংঘাত সেই আস্থার ভিত নড়বড়ে করে দিয়েছে। ট্রাম্পের শাসনামলে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির ছায়ায় বন্ধুরাও আজ ‘হুঁশিয়ারি’র মুখোমুখি। ইরান যখন হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি দেয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র তার আরব মিত্রদেরও ছাড় দেয়নি—জানিয়ে দেয়, “তোমাদের দেখছি আমরা”।
ইউক্রেন বারবার মার্কিন সহায়তা পেলেও পূর্ণ সামরিক সহায়তা নয়, বরং শর্তযুক্ত সহায়তা ও কূটনৈতিক চাপ—যা অনেকটা ‘গ্যাসলাইটিং’-এর মতো। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে প্রকাশ্যে অপমান করার ঘটনাও তার প্রমাণ।
ট্রাম্পের কথায়, "বিশ্ব আমেরিকাকে শোষণ করছে", তাই তিনি বহুপাক্ষিক চুক্তি ও সংগঠন থেকে সরে এসেছেন। ১৯ শতকের ব্রিটেনের মতো আমেরিকা যখন নিজের মধ্যে গুটিয়ে নেয়, তখন ছোট দেশগুলোর জন্য বিপদ আরও বাড়ে। তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে আজকের মধ্যপ্রাচ্যে।
ইরান যখন কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালায়, তখন একথা স্পষ্ট হয়—যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আর মিত্রদের জন্য যুদ্ধ করবে না, কিন্তু সেই মিত্রদের শত্রুরা প্রস্তুত তাদের শাস্তি দিতে। একমাত্র ব্যতিক্রম ইসরায়েল।
ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন যেন অন্ধ। ইরানকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে—ইসরায়েলের পাশে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় প্রস্তুত। এর ফল হিসেবে ইসরায়েলের আগ্রাসী নীতি দিনকে দিন বেড়েছে, তবে এতে অঞ্চলজুড়ে শান্তির কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয়নি।
ভিয়েতনাম, ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া—এইসব দেশে মার্কিন হস্তক্ষেপ শেষ পর্যন্ত শান্তি নয়, বরং বিশৃঙ্খলা ও চরমপন্থা বাড়িয়েছে। তাই বর্তমান বিশ্বে একপাক্ষিক মিত্রতার আশা করা দুর্বলতার নামান্তর।
আঁখি
