
ছবি: সংগৃহীত
হালকা জয়েন্ট ব্যথা বা হাত-পায়ে টান–অনেকেই এটিকে বয়সজনিত স্বাভাবিক উপসর্গ ভেবে উপেক্ষা করে থাকেন। কিন্তু কখনও কখনও এই সাধারণ উপসর্গগুলোই হতে পারে জয়েন্টের মারাত্মক রোগ ‘আর্থ্রাইটিস’-এর প্রাথমিক লক্ষণ। আর্থ্রাইটিস শুধু বয়স্কদের রোগ নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রেই এটি শুরু হয় তারুণ্যেই—নীরবে, ধীরে ধীরে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্থ্রাইটিস প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি অক্ষমতা বা জয়েন্ট বিকলাঙ্গতার ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই দেরি না করে জেনে নিন এমন ৮টি উপসর্গ, যেগুলোর একটিও থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন—বিশেষ করে রিউমাটোলজিস্টের।
১. দীর্ঘস্থায়ী জয়েন্ট ব্যথা
হঠাৎ কোনো ধাক্কা বা আঘাতের পর জয়েন্ট ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি হাঁটু, কবজি, গোড়ালি বা আঙুলের সন্ধিতে বারবার ব্যথা হয়, এমনকি বিশ্রামেও ব্যথা কমে না—তবে তা আর্থ্রাইটিসের পূর্বলক্ষণ হতে পারে।
২. সকালে ঘুম থেকে উঠে জয়েন্টে শক্তভাব
সকালে উঠে কি আপনার জয়েন্টগুলো শক্ত লাগে বা নড়াচড়ায় সমস্যা হয়? যদি ৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগে শরীর ‘ওয়ার্মআপ’ করতে, তবে সেটি ‘ইনফ্লেমেটরি আর্থ্রাইটিস’-এর ইঙ্গিত হতে পারে।
৩. জয়েন্টে ফোলাভাব
হাত, পা বা হাঁটুর সন্ধিতে ফুলে যাওয়া বা স্পর্শে গরম অনুভব হওয়া—এটি অনেক সময়ই জয়েন্টের অভ্যন্তরীণ প্রদাহের ফল। এটি আর্থ্রাইটিসের অন্যতম লক্ষণ।
৪. চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা
আগে যেভাবে হাঁটু ভাজ করা বা মুঠো আঁটা যেত, এখন কি সেটা সম্ভব হচ্ছে না? যদি দেখা যায় শরীরের কোনো জয়েন্ট আগের মতো নড়াচড়া করছে না, তবে সেটি জয়েন্টের স্থায়ী ক্ষতির ইঙ্গিত হতে পারে।
৫. সব সময় ক্লান্তি বা দুর্বলতা
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা লুপাসের মতো অটোইমিউন আর্থ্রাইটিসে দেহে সার্বিকভাবে ক্লান্তি, অবসাদ বা পেশিতে দুর্বলতা দেখা দেয়—যা বিশ্রামে গেলেও কমে না।
৬. জয়েন্টের আশপাশে লালচে ভাব বা উষ্ণতা
জয়েন্টের চারপাশে ত্বক লালচে হয়ে গেলে বা গরম লাগলে অনেকেই তা ত্বকের অ্যালার্জি ভাবেন। কিন্তু এটি যদি ব্যথা বা শক্ততার সঙ্গে হয়, তবে আর্থ্রাইটিসই দায়ী হতে পারে।
৭. হাত-পায়ে ঝিঁ ঝিঁ ভাব বা অসাড়তা
হাত বা কবজির জয়েন্টের প্রদাহে সেখানে থাকা স্নায়ুগুলো চাপে পড়ে যায়। এতে আঙ্গুলে ঝিঁ ঝিঁ ভাব, অবশতা বা সুচ ফোটার মতো অনুভূতি হয়। এটি ‘রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস’-এর সাধারণ উপসর্গ।
৮. অজানা কারণে ওজন হ্রাস বা জ্বর
শরীরের ভেতরে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ থাকলে হালকা জ্বর, ক্ষুধামান্দ্য বা ওজন হ্রাস দেখা দিতে পারে। কিন্তু জয়েন্টে ব্যথা না হওয়া পর্যন্ত অনেকেই এসব লক্ষণ উপেক্ষা করেন।
কেন প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা জরুরি?
• দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলে জয়েন্টের ক্ষয় প্রতিরোধ সম্ভব।
• ব্যথা কমে ও দৈনন্দিন কাজকর্মে সক্ষমতা বাড়ে।
• জয়েন্ট বিকৃতি ও স্থায়ী অক্ষমতার ঝুঁকি কমে।
• ফিজিওথেরাপি, ওষুধ, জীবনযাত্রা বদল ও প্রয়োজনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
আপনি বা আপনার কাছের কেউ যদি বারবার জয়েন্ট ব্যথা, সকালে শক্তভাব, ফোলাভাব বা অন্য কোনো উপসর্গে ভোগেন, তবে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার জয়েন্ট আপনার শরীরের ভিত্তি—এখনই যত্ন নিন, না হলে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে।
লেখক: ডা. বিনীশ নাজির, কনসালট্যান্ট রিউমাটোলজিস্ট, অ্যাপোলো হাসপাতাল, ব্যাঙ্গালুরু।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব