ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

গর্ভাবস্থায় জটিলতা: ভবিষ্যতে অপেক্ষা করছে মারাত্মক বিপদ, মৃত্যুঝুঁকি

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ২৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৫:৪০, ২৪ জুন ২০২৫

গর্ভাবস্থায় জটিলতা: ভবিষ্যতে অপেক্ষা করছে মারাত্মক বিপদ, মৃত্যুঝুঁকি

ছবি: সংগৃহীত

গর্ভাবস্থা যেমন আনন্দের সময়, তেমনি কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত শারীরিক জটিলতাও নিয়ে আসে। এসব জটিলতার তাৎক্ষণিক বিপদের কথা আগে থেকেই জানা থাকলেও, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে আরও উদ্বেগজনক তথ্য। ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে মঙ্গলবার (২৪ জুন) প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র জানায়, গর্ভাবস্থায় যে নারীরা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি কিংবা স্বল্প ওজনের শিশু জন্ম দেন, তাদের পরবর্তী জীবনে স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়।

কীভাবে ঘটে স্ট্রোক?

স্ট্রোক তখনই ঘটে, যখন কোনো রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায় বা ফেটে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। এটি দ্রুত চিকিৎসা না পেলে প্রাণঘাতী হতে পারে। বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক।

গর্ভকালীন জটিলতা কীভাবে স্ট্রোক বাড়ায়?

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ইউটিএইচ হেলথ হিউস্টনের গবেষক অধ্যাপক কেসি ক্রাম্পের নেতৃত্বে ৪০ বছর ধরে সুইডেনের ২২ লাখ নারীর গর্ভাবস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারীর গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া বা প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি হয়েছে, তাদের পরবর্তী জীবনে স্ট্রোকের আশঙ্কা দ্বিগুণের কাছাকাছি।

বিশেষ করে প্রসবের প্রথম ১০ বছর এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকলেও, তা ৩০ থেকে ৪৫ বছর পরও উচ্চ মাত্রায় রয়ে যায়। এমনকি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে সময়ের সঙ্গে ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়ে।

গবেষণার চমকপ্রদ ফলাফল

  • সাধারণ উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ
  • প্রিম্যাচিউর ডেলিভারিতে ঝুঁকি প্রায় ৪০% বেশি
  • প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়ায় ঝুঁকি ৩৬% বেশি
  • স্বল্প ওজনের শিশু জন্মের ক্ষেত্রে ঝুঁকি প্রায় ২৬% বেশি
  • দুই বা তার বেশি জটিলতা থাকলে ঝুঁকি আরও মারাত্মক

গবেষকদের মতামত

অধ্যাপক কেসি ক্রাম্প বলেন, ‘আমাদের গবেষণা এটাই প্রথম যেখানে একাধিক গর্ভকালীন জটিলতা ও ভবিষ্যতের স্ট্রোক ঝুঁকি নিয়ে এত বড় পরিসরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ ধরনের জটিলতা শিরা ও উপশিরার গঠন ও কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে, যা সময়ের সঙ্গে মারাত্মক হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারী ও তাদের চিকিৎসকদের এখনই বোঝা উচিত যে গর্ভকালীন জটিলতা ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তা। যেসব নারী এ ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হন, তাদের ওজন, খাদ্যাভ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা দেওয়া জরুরি।’

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. অ্যাবি লেইন বলেন, ‘নারী-পুরুষের স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ এক নয়। তাই নারীদেহে আগেভাগে এসব ঝুঁকি শনাক্ত করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সময় গর্ভকালীন স্বাস্থ্য জটিলতাকে ভবিষ্যতের হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কঘটিত রোগের পূর্বাভাস হিসেবে বিবেচনা করার। চিকিৎসা-পরামর্শ, জীবনধারার পরিবর্তন ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

 

সূত্র: টাইমস অভ ইন্ডিয়া।

রাকিব

×