
ছবিঃ সংগৃহীত
ফুসফুস ক্যান্সার—পৃথিবীর অন্যতম প্রাণঘাতী ক্যান্সারগুলোর একটি। বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিহ্নিত এই রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব। অথচ দুঃখজনকভাবে, বেশিরভাগ মানুষই এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর বিষয়ে জানেন না। এ কারণে দেরিতে রোগ ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা জটিল হয়।
আজকের এই প্রতিবেদন ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ, শনাক্তকরণ, ঝুঁকি ফ্যাক্টর ও প্রতিরোধের উপায় নিয়ে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ
ফুসফুস ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে নিরব ঘাতকের মতো শরীরে প্রবেশ করে। নিচের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি—
-
নতুন ধরনের কাশি যা ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে এবং কমছে না।
-
কাশির সঙ্গে রক্ত দেখা যাওয়া।
-
বুকের ব্যথা, বিশেষ করে গভীর শ্বাস নেওয়া বা কাশির সময়।
-
শ্বাসকষ্ট বা ঘন ঘন হাঁপানির মতো অনুভব।
-
হঠাৎ করে খাবারের রুচি কমে যাওয়া এবং ওজন কমে যাওয়া।
-
চিরস্থায়ী ক্লান্তি ও দুর্বলতা।
-
গলা বসে যাওয়া বা কণ্ঠস্বর পরিবর্তন।
-
ঘাড় বা বগলের লিম্ফ গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া।
প্রাথমিক শনাক্তকরণ ও স্টেজ
ফুসফুস ক্যান্সারের কারসিনোমা ইন সিটু ও স্টেজ ওয়ান পর্যায়কে প্রাথমিক ধাপ ধরা হয়। এই অবস্থায় ক্যান্সারটি নির্দিষ্ট লব বা অংশেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক সময় পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব হয়।
রোগী কখনো অন্য কোনো কারণে এক্স-রে করতে গিয়ে ছোট একটি নডিউল ধরা পড়ে, যেটা আসলে প্রাথমিক ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
কে ঝুঁকিতে?
-
দীর্ঘদিনের ধূমপায়ী ব্যক্তিরা (১০+ বছর ধরে প্রতিদিন ১ প্যাকেট সিগারেট)।
-
প্যাসিভ স্মোকার, অর্থাৎ অন্যের ধোঁয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরাও ঝুঁকিতে।
-
পরিবারে ক্যান্সারের জেনেটিক ইতিহাস থাকলে।
-
৪০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে হঠাৎ কাশি বা ওজন কমে যাওয়া হলে সতর্কতা জরুরি।
ডায়াগনোসিসে যেসব পরীক্ষা করা হয়
-
বুকের এক্স-রে
-
সিটি স্ক্যান
-
FNAC বা কোর বায়োপসি
-
PET স্ক্যান, ব্রেইন স্ক্যান, বোন স্ক্যান ইত্যাদি
এইসব পরীক্ষার মাধ্যমে টিউমার কোথায়, কী অবস্থায় আছে এবং অন্য কোথাও ছড়িয়েছে কিনা—তা নির্ধারণ করা হয়।
চিকিৎসা
-
প্রাথমিক অবস্থায় সার্জারি সবচেয়ে কার্যকর।
-
প্রয়োজনে কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়।
-
সর্বোচ্চ ফল পেতে হলে রোগটি আর্লি স্টেজে শনাক্ত হওয়া প্রয়োজন।
প্রতিরোধ ও সচেতনতা
-
ধূমপান সম্পূর্ণরূপে পরিহার করুন (অ্যাকটিভ ও প্যাসিভ উভয়ই)।
-
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
-
ফল ও শাকসবজি বেশি খান, রেডমিট, ফাস্টফুড ও স্মোকড খাবার কম খান।
-
৪০ বছরের বেশি ধূমপায়ী হলে বছরে অন্তত ১ বার লো-ডোজ সিটি স্ক্যান করে ক্যান্সার স্ক্রিনিং করুন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের ৮০% ফুসফুস ক্যান্সার রোগীই ধূমপানের সঙ্গে যুক্ত। তাই ধূমপান বন্ধ করাই হলো সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ।
উপসংহার
ফুসফুস ক্যান্সার নিরবে শরীরের ক্ষতি করে। তবে সচেতনতা, প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলে এই ক্যান্সার থেকেও মুক্তি সম্ভব। আপনার শরীরের ছোট কোনো পরিবর্তন বা উপসর্গকে অবহেলা করবেন না। এক্সরে, সিটি স্ক্যান কিংবা চেষ্টাটা যদি হয় সময়মতো—তাহলেই হতে পারে জীবন বাঁচানোর প্রধান চাবিকাঠি।
আপনার জীবন আপনার হাতে—জানুন, সচেতন হোন, বাঁচুন।
ইমরান