
ছবি: সংগৃহীত
“স্মৃতি হচ্ছে এমন একটি ডায়েরি, যা আমরা প্রত্যেকে সবসময় সঙ্গে নিয়ে চলি।” — অস্কার ওয়াইল্ড
এই দ্রুতগতির আধুনিক জীবনে শক্তিশালী স্মৃতিশক্তি শুধু প্রশংসার বিষয় নয়, এটি প্রয়োজনও। কর্মক্ষেত্রে তথ্য মনে রাখা হোক বা পরিচিত মানুষের নাম ভুলে না যাওয়ার বিষয়—একটি ভালো স্মৃতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক সুবিধা এনে দিতে পারে।
বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস মেনে চললে স্মৃতিশক্তি উন্নত করা সম্ভব। নিচে এমনই সাতটি কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো, যেগুলো মানলে আপনি আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ও স্মৃতি উভয়ই রক্ষা করতে পারবেন।
১. পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম
কেন গুরুত্বপূর্ণ: ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক স্বল্পমেয়াদি স্মৃতি থেকে দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিতে রূপান্তর ঘটায়, একে বলে মেমরি কনসোলিডেশন। বিশেষ করে REM (Rapid Eye Movement) ঘুম এই প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
উপায়:
-
প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করুন
-
ঘুমের অন্তত এক ঘণ্টা আগে স্ক্রিন ব্যবহার বন্ধ করুন
-
ঘুম ও জাগরণের নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করুন
২. নিয়মিত ব্যায়াম
কেন গুরুত্বপূর্ণ: শারীরিক কার্যকলাপ মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ায় এবং নতুন ব্রেন সেল তৈরিতে সাহায্য করে। Alzheimer’s Research & Prevention Foundation-এর গবেষণা বলছে, নিয়মিত ব্যায়াম স্মৃতিভ্রান্তির ঝুঁকি ৫০% পর্যন্ত কমাতে পারে।
উপায়:
-
হাঁটা, সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটা
-
সপ্তাহে অন্তত দু’দিন শক্তি-চর্চা
-
যোগব্যায়াম বা তাইচির মতো মন-দেহ ভিত্তিক অনুশীলন
৩. ব্রেন-বান্ধব খাবার খান
কেন গুরুত্বপূর্ণ: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিনযুক্ত খাবার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
স্মৃতিবর্ধক খাবার ও উপকারিতা:
-
ব্লুবেরি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, মস্তিষ্কের প্রদাহ কমায়
-
ফ্যাটি ফিশ (যেমন স্যামন): ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ
-
লিফি গ্রিনস (যেমন পালং শাক): ভিটামিন কে সমৃদ্ধ, যা স্মৃতি ভালো রাখে
৪. মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন চর্চা করুন
কেন গুরুত্বপূর্ণ: মেডিটেশন মনোযোগ বাড়ায়, মানসিক স্বচ্ছতা আনে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মেডিটেশন ব্রেনে গ্রে ম্যাটার বাড়ায়, যা শেখা, স্মরণ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত।
কীভাবে শুরু করবেন:
-
প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট মেডিটেশন করুন
-
গভীর শ্বাস ও চিন্তা নিরীক্ষণে মন দিন
-
ধীরে ধীরে সময় বাড়ান
৫. মানসিক ব্যায়াম করুন
কেন গুরুত্বপূর্ণ: যেমনভাবে শারীরিক ব্যায়ামে শরীর শক্তিশালী হয়, তেমনি মানসিক চ্যালেঞ্জ ব্রেনের নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাড়ায়, অর্থাৎ নতুন সংযোগ তৈরি করতে সাহায্য করে।
করতে পারেন:
-
ধাঁধাঁ, সুদোকু, মেমরি গেমস
-
নতুন ভাষা শেখা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো
-
ভিজুয়ালাইজেশন, মনেমনিক্স, বা তথ্য “চাঙ্কিং” করে মনে রাখার কৌশল
৬. সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকুন
কেন গুরুত্বপূর্ণ: নিয়মিত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্মৃতিভ্রান্তি ধীর করে, মানসিক চাপ কমায় এবং ভালো থাকার অনুভূতি বাড়ায়।
কী করবেন:
-
পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ
-
ক্লাব বা হবি গ্রুপে যোগ দিন
-
স্বেচ্ছাসেবী কাজ করুন বা কমিউনিটি ইভেন্টে অংশ নিন
৭. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
কেন গুরুত্বপূর্ণ: দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা ব্রেনের স্মৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিপোক্যাম্পাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সহজ উপায়:
-
নিয়মিত ব্যায়াম করুন, যা এন্ডরফিন নিঃসরণ করে
-
৪-৭-৮ পদ্ধতির মতো গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল
-
প্রতিদিন কিছু সময় লেখালেখি বা জার্নালিং করুন
ভালো স্মৃতিশক্তি অর্জন কোনো অসম্ভব ব্যাপার নয়। বরং জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে, নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে আপনি তা অর্জন করতে পারেন। এই অভ্যাসগুলো কেবল স্মৃতি নয়, আপনার সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যকেও উন্নত করবে।
স্মরণ রাখুন—ধৈর্য ও নিয়মিততা হল মূল চাবিকাঠি। আজই শুরু করুন ছোট ছোট পদক্ষেপে।
প্রশ্ন ও উত্তর
স্মৃতিশক্তি উন্নত হতে কত সময় লাগে?
সঠিক অভ্যাস ও নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসের মধ্যেই উন্নতি দেখা যেতে পারে।
স্মৃতি বৃদ্ধির জন্য সাপ্লিমেন্ট কি কার্যকর?
ওমেগা-৩, ভিটামিন B, C, E এবং গিংকো বিলোবা কিছু ক্ষেত্রে উপকারি হতে পারে, তবে সেগুলো গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
স্মৃতিভ্রান্তি কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব?
বয়সজনিত স্মৃতি হ্রাস পুরোপুরি রোধ করা না গেলেও ধীর করা সম্ভব। ঘুম, পুষ্টি ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অনেক সময় উন্নতি সম্ভব।
আবির