
ছবি: সংগৃহীত
দুর্বল হাড়ের সমস্যাকে সাধারণত বয়সজনিত বিষয় হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু আজকাল তরুণরাও নীরবে ভুগছেন হাড়ের ঘনত্ব হ্রাসজনিত সমস্যায়। এর পেছনে রয়েছে বসে বসে কাজ করার অভ্যাস, পুষ্টিহীন খাবার, এবং ফাস্টফুডের প্রতি বাড়তে থাকা নির্ভরতা। যদিও ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা, তবুও আমাদের রান্নাঘরের অনেক সাধারণ ও ঐতিহ্যবাহী খাবার আছে যা মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে হাড় মজবুত করতে কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এগুলোর দাম বেশি নয় এবং এগুলো আমাদের পারিবারিক খাদ্য তালিকায় বহু প্রজন্ম ধরে রয়েছে।
এখানে এমনই ৬টি খাবার তুলে ধরা হলো, যেগুলো বিজ্ঞানের প্রমাণ এবং প্রাচীন অভিজ্ঞতা—উভয়ের ওপর ভিত্তি করে হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে।
১. রাগি
রাগিকে অনেকেই ‘গরিবের ক্যালসিয়াম’ বলেন। ১০০ গ্রাম রাগিতে প্রায় ৩৪৪ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম থাকে, যা সমপরিমাণ দুধের চেয়ে বেশি।
রাগি কেবল ক্যালসিয়ামই দেয় না, সঙ্গে ফাইবার ও অ্যামিনো অ্যাসিডও সরবরাহ করে। বিশেষত রাগি যদি অঙ্কুরিত বা ফারমেন্টেড (যেমন রাগি দোসা) অবস্থায় খাওয়া হয়, তবে এর ক্যালসিয়াম শোষণ ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়। প্রতিদিন সকালে রাগির খিচুড়ি বা রুটি খেলে এক মাসের মধ্যেই হাড়ের ঘনত্ব বাড়তে শুরু করে।
২. গন্ড (গুঁদ)
শীতকালে লাড্ডু বা পাঞ্জিরিতে ব্যবহৃত এই প্রাকৃতিক গন্ড শরীরকে গরম রাখে এবং হাড়কে শক্তিশালী করে বলে বিশ্বাস করা হয়।
গন্ডে রয়েছে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম, পাশাপাশি এটি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে—যা হাড় নমনীয় রাখে এবং জয়েন্টগুলোকে সুরক্ষা দেয়। বাদাম ও ঘি মিশিয়ে বানানো গন্ডের লাড্ডু প্রতিদিন খেলে বিশেষ করে গর্ভকালীন পরবর্তী সময়ে বা মেনোপজে হাড় দুর্বলতা কমে যায়।
৩. সাদা তিল
এক চামচ তিলে থাকে এক গ্লাস দুধের চেয়েও বেশি ক্যালসিয়াম। তবে এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ও ভালো ফ্যাট ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। প্রতিদিন তিলের চাটনি বা রোস্ট করে খাওয়া হাড়ের ঘনত্ব ফিরিয়ে আনতে কার্যকর। সঙ্গে লেবুর রস ও বিট লবণ দিলে খনিজ উপাদানের শোষণ বাড়ে।
৪. সজনে পাতা
কেল বা পালংয়ের চেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে সজনে পাতায়। কিন্তু একে এখনো অধিকাংশ মানুষ অবহেলা করেন।
সজনে পাতায় ১০০ গ্রামে প্রায় ২৫০ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম থাকে। এছাড়াও এতে আছে ভিটামিন কে, যা হাড়ে ক্যালসিয়াম বাঁধতে সাহায্য করে। সজনে ভাজি বা সজনে পাতার গুঁড়ো ডালে মিশিয়ে খেলে হাড় দুর্বলতা ও পায়ের ব্যথা দ্রুত কমে যায়।
৫. রাজগিরা (আমরন্থ)
উপবাসের দিনে খাওয়া হয় বলে পরিচিত এই শস্যে আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও লাইসিন অ্যামিনো অ্যাসিড—যা ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে সাহায্য করে।
রাজগিরা ক্যালসিয়াম চুষে নেয় না বরং হাড়ের কাঠামো গঠনে সাহায্য করে। রাজগিরা লাড্ডু বা দুধ/পানিতে রান্না করা পায়েস নিয়মিত খেলে হাড় শক্ত হয়। এতে আছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ, যা জয়েন্টের ব্যথা কমায়।
৬. কুলথি ডাল
কুলথি ডালে আছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পলিফেনল ও ফ্ল্যাভনয়েড—যা হাড়ের প্রদাহ কমায়। পাশাপাশি কিডনি পরিষ্কার রাখে, যা শরীরে ক্যালসিয়াম-ফসফরাসের ভারসাম্য বজায় রাখতে জরুরি। রসুন ও জিরে দিয়ে রান্না করে কুলথি ডাল খাওয়া হাড়ের শক্তি বাড়ায়।
দামী সাপ্লিমেন্ট বা বিদেশি সুপারফুড নয়—রাগি, তিল, সজনে, গন্ড, কুলথি ও রাজগিরার মতো সহজলভ্য খাবারই হতে পারে হাড় মজবুত করার সবচেয়ে কার্যকর পথ। নিয়মিত এসব খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললেই হাড় থাকবে শক্ত ও সুস্থ।
আবির