ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

গোপালগঞ্জে ধর্মান্তরের পর নির্যাতনের অভিযোগ, সংবাদ সম্মেলনে বিচার দাবি

নিজস্ব সংবাদদাতা, গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭:১৫, ২৪ জুন ২০২৫

গোপালগঞ্জে ধর্মান্তরের পর নির্যাতনের অভিযোগ, সংবাদ সম্মেলনে বিচার দাবি

ইসলাম ধর্মকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম মেনে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম ছেলেকে বিবাহ করার কারণে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হামলা, অত্যাচার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা লাগিয়ে দেওয়া এবং এলাকা থেকে বিতাড়িত করার প্রতিবাদে ও ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তুবা আলমগীর নামে এক ভুক্তভোগী নারী।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের হলরুমে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

ন্যায়বিচারের আশায় সাংবাদিকদের সামনে হাজির হয়েছেন উল্লেখ করে তুবা আলমগীর লিখিত বক্তব্যে বলেন, “পাঁচ বছর আগে আমার প্রয়াত স্বামী অসীম কুমার সাহা কিডনি ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার রেখে যাওয়া দুই নাবালিকা কন্যাসন্তান নিয়ে তখন থেকেই আমার জীবন সংগ্রাম শুরু হয়। সম্পত্তির লোভে আমার ভাশুর ও দেবর নানাবিধ অত্যাচার, কুৎসা রটনা ও ষড়যন্ত্র শুরু করে।”

তিনি বলেন, “আমার বড় মেয়ে লাবণ্য সাহা অপ্রাপ্ত বয়সে একটি বখাটে ছেলের প্রেমে পড়ে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ে। আমি তাকে শাসন করতে গেলে মেয়ের প্রেমিক গৌরব সাহা ও তার লোকজন আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করতে থাকে। একপর্যায়ে ২০২৩ সালে দেবর, ভাশুর এবং মেয়ে ও তার প্রেমিকের যোগসাজশে আমার দোকান থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার মালামাল চুরি হয়ে যায়; যার বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া থানায় ডায়েরি করা হয়েছে। তখন প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় মহাজনের কাছ থেকে স্বর্ণ বাকিতে নিয়ে আমি আবার ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু ২০২৪ সালে আমার মেয়ে লাবণ্য রাতের আঁধারে দোকানে রাখা প্রায় ১২ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে গৌরব সাহার সঙ্গে পালিয়ে যায়। এতে করে আমি আমার স্বামীর রেখে যাওয়া সব অর্থ-সম্পদ হারিয়ে ফেলি।”

তিনি আরও বলেন, “ইতিপূর্বেই ইসলামের প্রতি আমার গভীর টান ছিল। ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে আমি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছি। গত ৪ মে একটি এফিডেভিটের মাধ্যমে আমি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি এবং মুসলিম আলমগীর বিশ্বাসকে বিয়ে করি। আর এটাই যেন আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়।”

“আমার ভাশুর বিনয় সাহা, সব্জিত সাহা ও গৌতম সাহা এবং বাজার কমিটির সভাপতির প্রত্যক্ষ নির্দেশে আমার বড় মেয়ে ও তার স্বামীকে দিয়ে আমাকে রাতের অন্ধকারে এক কাপড়ে ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। আমি আমার ছোট মেয়েকে নিয়ে বর্তমান স্বামীর কাছে আশ্রয় নিই। এরপর তারা ‘সম্পা জুয়েলার্স’ নামে আমার দোকানে তালার ওপর আরেকটি তালা লাগিয়ে দেয় এবং বসতঘরের তালা ভেঙে আমার অবাধ্য মেয়ে-জামাইকে সেখানে তুলে দেয়।”

“এরপর যখন পাটগাতি বাজারে যাই, তখন আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এখন প্রাণ ভয়ে আমি বাজারে যেতে পারছি না। দোকানে যারা গহনার অর্ডার দিয়েছিলেন, তাদের গহনাগুলো দোকানের সিন্দুকে থাকায় দিতে পারছি না। ফলে তারা বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এখন আমার বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। পরনের কাপড়চোপড় পর্যন্ত আনতে দিচ্ছে না।”

সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে তুবা আলমগীর বলেন, “মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করাটা কি আমার অন্যায়? আমার কি ধর্মান্তরের স্বাধীনতা নেই? আমার কি বেঁচে থাকার অধিকার নেই?”

এই প্রশ্নগুলো তুলে ধরে তিনি প্রশাসনের কাছে সুবিচার চান এবং তার ব্যবসা, বসতভিটা, মালামালসহ সবকিছু ফেরত পাওয়ার দাবি জানান।

সজিব

×