পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, কোনো ধরনের মবকেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। মব সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। মব নিয়ন্ত্রণে কোনো পুলিশ সদস্যের গাফিলতি পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার ডিএমপির সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার জানান, মব তৈরি করে উত্তরায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদাকে হেনস্তার ঘটনায় এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা মব জাস্টিস এলাউ করছি না। অনেক মামলাও নিয়েছি।
মব জাস্টিসের ঘটনায় আমরা ছিনতাই ও ডাকাতির মামলা নিয়েছি। মব জাস্টিসের এক-দুটি ঘটনায় পুলিশ অফিসাররা তাদের কর্তব্যে অবহেলার কারণে তাদের বিরুদ্ধেও সাসপেন্ড ও শাস্তি দিয়েছি। তিন মাস চার মাস আগে যে পরিমাণ মব জাস্টিস ছিল এখন সে পরিমাণ নেই। তিনি বলেন, রাতে বাড়িতে আসামি আছে সেই বাড়িতে হানা দেওয়া, দরজা ভাঙা বা কিছু করা এ ধরনের ঘটনা এলাউ করছি না।
এ কারণে সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনা কমে গেছে। কেউ যেন কোনো অপরাধীকে ধরার জন্য না যায়। আপনারা পুলিশকে খবর দেবেন, আমরা সেখানে যাব এবং আমরা তাদের ধরব। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। যে সব অফিসার এ ধরনের ঘটনায় ব্যবস্থা নেবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
চাঁদাবাজির এক প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আদাবর থানায় একটি চাঁদাবাজির ঘটনায় আমরা মামলা নিয়েছি এবং গ্রেপ্তার করেছি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাস্তাকে দাবি আদায়ের জায়গা বানাবেন না। সকলকে অনুরোধ করছি, প্লিজ আপনারা রাস্তাকে বেছে নেবেন না। রাস্তায় কোনো ব্লক দেবেন না। মানুষকে দুর্ভোগ দেবেন না।
শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, গত সাত মাস যাবৎ এত রিকোয়েস্ট সত্ত্বেও আমি সাড়া পাইনি, পাচ্ছি না। তবে আমি হতাশ হতে চাই না। আমি ঢাকাবাসীর কাছে, সকলের কাছে এই অনুরোধ রাখতে চাই। আপনারা রাস্তাকে দাবি আদায়ের স্থল বানাবেন না। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যা সমাধান করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি জানান, তাদের সঙ্গে টেবিলে বসুন, তাদের অফিসে যান। টেবিলে বসে সমস্যা সমাধান করুন। রাস্তা সমস্যা বা দাবি আদায়ের কোনো স্থল হতে পারে না।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, দাবি আদায়ের জন্য সড়ক বন্ধ করে রাখলেও ‘পটপরিবর্তনের’ আগের পুলিশের মত বর্তমান পুলিশ আচরণ করতে চায় না। তিনি বলেন, যে ঘটনা হয়েছে এই ঘটনা আমরা চাই না। আমি কোনো বিদেশি পুলিশ না, ব্রিটিশ পুলিশ না বা অন্য দেশের পুলিশ না। আমার দেশের মানুষের ওপর কোনো লাঠিচার্জ বা কোনো ধরনের শক্ত ব্যবস্থা নিতে আমি চাই না, কোনোভাবেই নিতে চাই না।
অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেক রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে তিনি নিজে বৈঠক করেছেন জানিয়ে সাজ্জাত আলী জানান, ফরমালি আমি পলিটিক্যাল পার্টির নেতৃবৃন্দকে, তাদের প্রতিনিধিদের আমার অফিসে দাওয়াত দেব। তাদেরও রিকোয়েস্ট করব তারা যেন রাস্তায় প্রোগ্রাম না দেয়। ঢাকার ‘যাচ্ছেতাই’ ট্রাফিক ব্যবস্থার সমস্যা সমাধানে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, আপনারা কেউ কোনো দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য রাস্তায় আসবেন না, প্লিজ রাস্তায় আসবেন না।
পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মহিদুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী বুধবার রাতে হানিফ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। হানিফ স্বেচ্ছাসেবক দলের উত্তরা পশ্চিম থানার নেতা। তার বিরুদ্ধে পরবর্তী প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও মহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে জাইকার কারিগরি সহযোগিতায় ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিআরএসপি প্রজেক্টের অধীনে ‘সড়ক নিরাপত্তা পোস্টার ও স্লোগান’ প্রতিযোগিতায় ১০ শিক্ষার্থীকে পুরস্কার তুলে দেন ডিএমপি কমিশনার। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার এবং জাইকার কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
